
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চুনকুড়ি গ্রামে এলজিইডির রাস্তা নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সরকারম প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর অর্থায়নে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত (১৩০০মিটার) প্রায় ১.৫ কিলোমিটার রাস্তাটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পান মো. ফারুক মোল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফারজানা এন্টারপ্রাইজ।
এলজিইডির (২০১৮-১৯) অর্থবছরের কার্পেটিং কাজের অনুকূলে প্রায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চুনকুড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ইয়ারব ফকিরের বাড়ি থেকে ধল গ্রামের লুৎফর ফকিরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটি প্রায় ১.৫ কিলোমিটার। নির্মাণাধীন কাজটির শুরু থেকে অত্যন্ত নিম্নমানের নাম্বারবিহীন ইট, খোয়া ও নিয়ম অমান্য করে ভূগর্ভস্থ মাটিযুক্ত বালু ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এই রাস্তার কাজ তদারকিতে এলজিডির কর্মকর্তাদের গাফলতি আছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনিয়মের অভিযোগ করে কাজটি বন্ধ রাখার অনুরোধ করলেও কর্ণপাত করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান বলেন, কাজটি অত্যন্ত নিম্নমানের আমি কয়েকবার কাজের মান নিয়ে তাদের সাথে কথা বলেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
চরম অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলা কাজটি শেষের দিকে, তার পরেও এলাকাবাসী বাঁধা দিলে কাজ ফেলে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে দ্রুত কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফারজানা এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে কাজ নেওয়া সাব কন্টাক্টে ঠিকাদার।
সরেজমিনে রাস্তাটি পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ১.৫ কিলোমিটার সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয়। বালুর পরিবর্তে কাদামাটি দিয়ে তার উপর নিম্নমানের পুরানো ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। একটা ইটের চার ভাগ করে সেটা খোয়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর বালু দিয়ে নিম্নমানের ইটের ভাঙা অংশ (রাবিশ) দিয়ে কোন ভিটামিন ছাড়া কার্পেটিং এর কাজ করা হচ্ছে। চার থেকে পাঁচ দিনের কার্পেটিং হাতের চাপে উঠে আসছে। কার্পেটিংয়ের পরের অংশ বিটুমিন থাকার কথা থাকলেও তা খুঁজে পাওয়া যায় নি। বরং সেখানে দেখা গেছে নিম্নমানের মোটা খোয়া ও কাঁদা যুক্ত বালু। শুধু তাই নয় পল্লি বিদ্যুতের খুঁটি ও খুঁটির তার রাস্তার মাঝখানে আছে। এবিষয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে সংশ্লিষ্টরা কর্ণপাত করেনি বলে জানা গেছে।
স্থানীয় মুজাহিদ, নিহার মন্ডল, সুশান্ত মন্ডল, হাফিজুর রহমান, ধর্মদাস মন্ডল, সুভাষ মন্ডল ও নয়ন ফকিরসহ অনেকের অভিযোগ, সরকার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ রাস্তায় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের ফলে কিছু দিনের মধ্যেই রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। এখানে কোন প্রকার নিয়ম মানা হচ্ছে না। কিছু বললেও কর্ণপাত করছে না। অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। এই রাস্তাটি আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল কিন্তু এখন দেখছি কাজ শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই এটি নষ্ট হয়ে যাবে। ইটের সুড়কির উপর কার্পেটিং করা হচ্ছে। কোন প্রকার বিটুমিন দেয়া হচ্ছে না। আগেই কাদামাটি যুক্ত বালু ও নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। তারপরও যদি এখন কাজটা সঠিক হতো তাহলে হয়ত কিছুদিন থাকতো।
অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফারজানা এন্টারপ্রাইজের মো. ফারুক মোল্লা বলেন, আমি তিন চার বছর আগে কাজটি ডাম্পার ব্যবসায়ী আশরাফের কাছে বিক্রয় করে দিয়েছি সেও এখন পালাতক। এখন কাজ করছে এলজিইডি অফিসের সাবেক কম্পিউটার অপারেটর ও ঠিকাদার সাত্তার কাজটি করছেন বলে জানান।
আপনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বদনাম হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনারা যা খুশি করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, কাজটি আগে থেকেই ঝামেলা হয়ে আসছে আমরা চেষ্টা করছি সঠিকভাবে করার জন্য একটু ঝামেলা হয়েছে বুঝতে পারছি এটা সংশোধনের চেষ্টা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন বলেন, বিষয়টি আমি আন্তরিকতার সাথে দেখব। যদি অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন অনিয়মের সুযোগ নেই সঠিক ভাবে কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত চার বছর আগে প্রথম কাজটি পান ফারজানা এন্টারপ্রাইজের মো. ফারুক হোসেন মোল্লা। কিছুদিন পর তিনি কাজটি ডাম্পার ব্যবসায়ী আশরাফের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে আরো এক সাব ঠিকাদার কয়েক দিন কাজটি করেন। সর্বশেষ এলজিইডি অফিসের অস্থায়ী কম্পিউটার অপারেটর সাত্তার কাজটি করছেন বলে জানা গেছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর