জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র বিভক্তির বদলে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করেছে। তাদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে। জামায়াত কোন অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি, কেবলই আল্লাহর কাছে মাথা নত করেছে।
যার ফলাফল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টের পতন। আমরা চাঁদাবাজী-দুর্নীতি করবো না, কাউকে করতেও দিবোনা। এজন্য জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে সর্বত্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা ছাত্র-জনতার স্বপ্নের সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চাই।
জামায়াত আমীর বলেন, ২০০৬ সালে লগি বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বর্বও হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। দীর্ঘ ১৬ বছরে তারা ইতিহাসের বর্বর ও আগ্রাসী শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে গণধিকৃত একটি দলে পরিনত হয়েছে। তাদেরকে জনগণ চায় কিনা সেটা শহীদ ও আহতদের এবং তাদের পরিবারকে জিজ্ঞেস করলেই বুঝা যাবে।
পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি কখনো আনসার লীগ, কখনো রিক্সালীগ, কখনো চাকুরী লীগ আবার কখনো ইসকন লীগ রুপে ফিরে এসে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছি। তারা শেষমেষ ধর্মীয় দাঙ্গার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু দেশপ্রেমিক জনগণ ধর্ম-বর্ণ, দলমত নির্বিশেষ আরো বেশী ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছে।
তিনি শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে দীর্ঘ দেড় যুগ পর সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে সিলেট জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী জয়নাল আবেদীন, সহকারী সেক্রেটারী নজরুল ইসলাম ও মাওলানা মাশুক আহমদের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিপুলসংখ্যক জনশক্তি উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টায় সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হলেও ভোর হতেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় আলিয়া ময়দান। সম্মেলন শুরুর আগেই আলিয়া মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
জামায়াত আমীর, দীর্ঘ ১৬ টি বছর আমরা অনেক ত্যাগ শিকার করেছি, আরও ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত তবুও ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সাম্যের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের শীর্ষ ১১ নেতৃবৃন্দের কাউকে ফাঁসি দিয়েছে ও কাউকে হত্যা করেছে। জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও ফাঁিসর রায় দিয়েছে। আল্লাহর ফয়সালায় তিনি জীবিত রয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ন্যায় বিচার পেয়ে তিনি মুক্ত আকাশের নিচে ফিরবেন ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, এই দেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের দেশ। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভিন্নধর্মের নেতৃবৃন্দ যে ধরনের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন সেজন্য তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে প্রতিবেশী দেশ সংখ্যালঘু কার্ড খেলতে চেয়েছিল। আমরা বার বার বলেছি এদেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরুর নামে আর কোন বিভক্তি চাইনা। এর প্রতিফলন গোটা বিশ^বাসী দেখতে পেয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র বিভক্তির বদলে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করেছে।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সুনামগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান, মৌলভীবাজার জেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, সিলেট জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ও হাফেজ আনওয়ার হোসাইন খান, হবিগঞ্জ জেলা জামায়াত নেতা মহসিন আহমদ, সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, উপাধ্যক্ষ সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, সিলেট মহানগর ছাত্রশিবির সভাপতি শরীফ মাহমুদ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি তারেক মনোয়ার, সিলেট জেলা পূর্ব ছাত্রশিবির সভাপতি মারুফ আহমদ, সাবেক ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, সাবেক গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজ নজমুল ইসলাম।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর