• ঢাকা
  • ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৭ ঘন্টা পূর্বে
হাসান আল সাকিব
রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:৪৮ বিকাল
bd24live style=

রংপুর মেডিকেলে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে হৃদরোগীরা, সেবা বন্ধ করতে মরিয়া সিন্ডিকেট

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থাপিত 'ক্যাথল্যাব'  (কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন ল্যাবরেটরি) ২০১২ সালে চালু হয়। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানা কারণে এর কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে আবার এর কার্যক্রম চালু করা হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে এর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

রমেকে এখন ক্যাথল্যাবের চিকিৎসার সফলতা ৯৯ দশমিক ২ শতাংশ, যা অভাবনীয় বলে চিকিৎসকরা বলছেন। পুনরায় ক্যাথল্যাব চালু হওয়ায় এখন রংপুরে হৃদরোগীদের চিকিৎসা সেবা চালু হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে হার্টের এনজিওগ্রাম, রক্তনালিতে স্টেন্ট (রিং) বসানো এবং পেস-মেকার স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে রমেক হাসপাতালে। এতে হৃদরোগীদের চিকিৎসা ব্যয় যেমন অনেক কমেছে, তেমনি রোগীদের ভোগান্তিও লাঘব হয়েছে। 

তবে রংপুর মেডিক্যালের কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথল্যাব বিভাগের চিকিৎসকের এমন সফলতায় উত্তরাঞ্চলের হৃদরোগীরা খুশি হলেও টনক নড়েছে মেডিক্যালের এক সিন্ডিকেটের।হৃদরোগীরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়ায় আর ঢাকা মুখী হচ্ছেন না।এতেই পেটে লাথি পড়েছে সিন্ডিকেটের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রমেকে ক্যাথল্যাব চালুর পূর্বে হৃদরোগীদের কিছু  চিকিৎসক ও দালাল মিলে ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতেন একটি সিন্ডিকেট। এতে বড় মাফের কমিশন পেত এ সিন্ডিকেট। তবে রমেকে ক্যাথল্যাব চালু হওয়ায় সেই সিন্ডিকেট  ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে, সেই সিন্ডিকেট এবার ৩ রোগীকে দিয়ে রমেকের কার্ডিওলজি বিভাগের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে রমেকের ক্যাথল্যাবের সেবা বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।

রমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে প্রথমবার ক্যাথল্যাব চালু হয়। সে সময় দেড় শতাধিক এনজিওগ্রাম, রিং বসানো এবং পেস-মেকার স্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। তবে করোনার সময়ে এবং মেশিন নষ্টসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ সময় ক্যাথল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। নতুন করে ল্যাবটি চালু হওয়ায় হৃদরোগীদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমেছে। কারণ বেসরকারি হাসপাতালে হার্টের এনজিওগ্রাম করতে খরচ হয় ১৭-১৮ হাজার টাকা। সেখানে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ২ হাজার টাকা।

একেকটি রিং কিনতে ৭০ হাজার থেকে প্রকারভেদে দেড় লাখ টাকা লাগে। রিং বসাতে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে রিং বসানোর চার্জ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা এবং পেস-মেকার যন্ত্রের দাম দেড় লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। পেস-মেকার স্থাপনে বেসরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ৬০ হাজার টাকার বেশি। সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ২ হাজার টাকা।

রমেক হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা নিয়েছেন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার আব্দুল মজিদ (৫০)। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন তার হার্টে রিং স্থাপন করতে হবে। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে রিং স্থাপন ব্যয়বহুল হওয়ায় তিনি তা করতে পারছিলেন না। চলতি বছরে মার্চ মাসে রমেক হাসপাতালে রিং স্থাপন করে তিনি সুস্থ আছেন।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর আব্দুল জব্বার (৬০) হৃদ্‌রোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।তার হার্টে রিং স্থাপন জরুরি হয়ে পড়ে। আর্থিক সংকটের কারণে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারছিলেন না। কিন্তু রমেক হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করে নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন সুস্থ আছেন।

হৃদ্‌রোগ নিয়ে চিকিৎসা নেয়া রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার  বড় বিল ইউনিয়নের আব্দুল বাতেন মিয়া বলেন, হৃদ্‌রোগ নিয়ে রমেকে ভর্তি হয়েছিলাম।গত ১৮ নভেম্বর আমার হার্টে রিং স্থাপন করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি এখন। প্রতিদিন নামাজ পড়ে চিকিৎসকের জন্য দোয়া করি। 

রমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় ছয় বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথল্যাব পুনরায় সচল করেছি। হার্টের সর্বোচ্চ এবং আধুনিক চিকিৎসা বলতে যা বোঝায় তা ক্যাথল্যাবে দেওয়া সম্ভব। এখন রংপুরের হৃদরোগীদের আর ঢাকা অথবা দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কম খরচে এনজিওগ্রাম, রিং বসানো এবং পেস-মেকার স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা রমেক হাসপাতালে হচ্ছে। বর্তমানে একটি মাত্র পুরোনো এনজিওগ্রাম মেশিন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া প্রতিদিন ক্যাথল্যাব চালু রাখার সক্ষমতা থাকলেও একজন টেকনোলজিস্ট দিয়ে সপ্তাহে মাত্র দু-দিন চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ডা. মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, গত দুবছরে রমেকে ৬ শতাধিক এনজিওগ্রাম, রিং স্থাপন ১০০টি, পেস-মেকার স্থাপন ৫০টি ও টেমপোরারি (সাময়িক ) পেস-মেকার স্থাপন হয়েছে শতাধিক। 

তিনি আরও বলেন, রোগীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে একটি ডাটা প্রস্তুত করেছেন। তাতে দেখা গেছে, রমেকের হৃদ্‌রোগ বিভাগের এই সব চিকিৎসার সফলতা শতকরা ৯৯ দশমিক ২ ভাগ।

সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে তিন রোগীর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিং পরানো এবং এনজিওগ্রাম খরচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগুলোর ৩ ভাগের ১ ভাগ হওয়ায় একটি সিন্ডিকেট ও কুচক্রী মহল এ অভিযোগ করিয়েছেন। এই চক্রটি চায় না রংপুরে রোগীরা কম খরচে সেবা পাক।

তিনি আরও বলেন,  হার্টে রিং পরানোর এবং এনজিওগ্রাম করার সময় ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয় সেখানে রোগীর স্বজনকে সেটা দেখিয়ে দেওয়া হয় এবং সিডি করে সেই ডিস্ক রোগীকে দেওয়া হয় সেখানে সবকিছু ক্লিয়ার দেয়া রয়েছে।এখানে কোনো কিছু আড়াল করার সুযোগ নেই।

রমেক হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হরিপদ সরকার বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ক্যাথল্যাবে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। ফিলিপস কোম্পানির মাধ্যমে ল্যাবটি সচল করা হয়েছে। রংপুরের হৃদরোগীরা যাতে রংপুরে বসেই এই হাসপাতালে এসব চিকিৎসার সর্বাধিক সুবিধা পান সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথল্যাবে একটি চিকিৎসক টিম খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। গত দুই বছরে রমেকে হৃদরোগীদের হার্টে রিং বসানোর সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। এবং ওই চিকিৎসক অনেক অভিজ্ঞ। তবে  ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তিনজন অভিযোগ করেছে।

তিনি বলেন,  অভিযুক্ত চিকিৎসক দোষী হতে পারেন।আবার তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সিন্ডিকেট কৌশলে ষড়যন্ত্র করতে পারে। আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।তদন্ত প্রতিবেদনের পর বিস্তারিত জানতে পারবো।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com