কিশোরগঞ্জে জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেয়া হয় জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন এমন কয়েকজনকে।
অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল 'বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা' গত ১৬ ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে ডিসিকে মঞ্চে রেখেই ইদ্রিস আলী ভুঁইয়া নামে এক মুক্তিযোদ্ধা প্রশ্ন তোলেন- 'আবু সাঈদ কীসের শহীদ? আবু সাঈদ শহীদ হইছে? কার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হইছে? তারা আন্দোলন করছে, দেশটাকে একহাত থেকে আরেক হাতে পরিবর্তন করছে। তারা এখন আমাদেরকে শাসন করবে?' বক্তব্য শেষে তিনি 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' বলে স্লোগান ধরেন।
এ সময় ডিসি তার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপারও।
অনুষ্ঠানের এ বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গতকাল মঙ্গলবার থেকে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তোলপাড় সৃষ্টি হয় সারা দেশে। নেটিজেনরা দাবি তোলেন কথিত ওই মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতারের এবং ডিসিকে প্রত্যাহারের। ঘটনার দুই দিন পার হয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে আছেন ডিসি।
জানা গেছে, ইদ্রিস আলী ভুঁইয়া আওয়ামী লীগের সময়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ছিলেন। তার ছেলে খালেদ সাইফুল্লাহ সাফাত নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন জেলা ছাত্রলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতারের দাবিতে যারা মানববন্ধন করেছিলেন ডিসি তাদের অধিকাংশকেই ডেকে নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেন এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ রেখে তাদেরকেই বক্তৃতার সুযোগ দেন।
এ ঘটনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফৌজিয়া খান সাংবাদিকদের বলেন, দলমতের চিন্তা না করে আমরা তালিকাভুক্ত সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলাম। বক্তব্যে কে বা কারা কি বলেছে আমি তা লক্ষ্য করিনি। এছাড়া অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কারা বক্তব্য দেবেন এটাও আমি নির্ধারণ করিনি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাই এটা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।'
এ রকম পরিস্থিতিতে 'বীর শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে ডিসি এবং এসপির সামনে কটূক্তি ও বিতর্কিত স্লোগান এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন' কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার বেলা ১১টায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলার ব্যানারে ডিসি অফিস প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জেলা সমন্বয়ক ইকরাম হোসাইন তার ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ওইদিন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগ সময়ের জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এবি ছিদ্দিক, অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন ফারুকী, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার মাহবুব আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান খান, এছাড়াও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঞা প্রমুখ। এদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামীলীগ ঘরানার বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে যাদের দাপটের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেখা যেতো, তাদের অনেককেই এখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাপটের সাথেই অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। তাঁরা বক্তব্যও দেন। সোমবার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তাদেরই সরব উপস্থিতি এবং বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এর মধ্যে সাবেক কমান্ডার ইদ্রিছ আলী ভুঁইয়া ২৪ এর জুলাই আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করেন।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসককে আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে আওয়ামী ঘরানার লোকজনকে যেন না রাখা হয়। কিন্তু সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যা ঘটেছে তা মেনে নেয়ার মতো নয়। আমরা মনে করি জেলা প্রশাসকের ব্যর্থতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাই।
এ ব্যাপারে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, কিশোরগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ২৪ এর শহীদ ভাইদের সঙ্গে এটি প্রতারণা। আমরা মনে করি, প্রশাসনে আওয়ামী লীগের অনেক দোসর রয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় তারা দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ এবং পদোন্নতি লাভ করেছে। প্রশাসনের অনেকে মনে করে যে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে।'
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর