সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়িতে ‘বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি. (মিল্কভিটা)’র অনুকূলে থাকা গোচারণভূমি আবারও বেহাত হতে শুরু হয়েছে। অতি মুনাফালোভী ভূমিদস্যু একটি চক্র মিল্কভিটার অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গোচারণভূমি শসা চাষীদের কাছে উচ্চ মূল্যে ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
চলতি বছরে বৃ-আঙ্গারু এলাকায় অন্তত দেড়শত বিঘা জমি শসা চাষীদের ইজারা দেওয়া হয়েছে। এসমস্ত জমি সমবায়ীদের মধ্যে বণ্টন করে কাঁচা ঘাস উৎপাদনের কথা থাকলেও প্রতি বিঘা জমি ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকায় ইজারা দিয়ে দিগন্ত জুড়ে চাষ হচ্ছে শসা। মিল্কভিটার নিয়ম ভঙ্গ করে শসা আবাদ করে চাষীরা লাভবান হলেও গোচারণভূমি কমে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হবে ক্ষুদ্র খামারীরা।
সরেজমিনে বৃ-আঙ্গারু এলাকার গোচারণভূমিতে গেলে দেখা যায় দিগন্তজুড়ে আবাদ হচ্ছে শসা। মাঠের পর মাঠ থেকে শতশত মানুষ একযোগে গাছ থেকে শসা তুলে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। জানতে চাইলে শসা চাষি পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার নতুনগ্রামের আব্দুল জলিল, জাবেদ সরকার জানান, তারা বৃ-আঙ্গারু গ্রামের স্থানীয় একটি প্রাথমিক সমবায় সমিতির সভাপতি হাজি আব্দুল লতিফ এবং একটি সমিতির ম্যানেজার জাহাজের মাধ্যমে ১২-১৬ হাজার টাকার বিনিময়ে বাৎসরিক ইজারা নিয়ে শসা চাষ করছেন। জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে মিল্কভিটার বিস্তীর্ণ এই গোচারণভূমিতে শসা চাষের নিয়ম আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, তারা টাকার বিনিময়ে ইজারা নিয়ে শসা চাষ করছেন। এছাড়া শসা চাষের ফলে জমির আগাছা পরিষ্কার হবে বলেও জানান।
আরেক শসা চাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, মিল্কভিটার আওতাধীন এখানকার অন্তত দেড়শত বিঘা জমিতে শসা চাষ হচ্ছে। সবাই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ইজারা নিয়েই চাষ করছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দক্ষিণ বাঙ্গালপাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি হাজি মোঃ লতিফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কোন শসা চাষিকে ইজারা দেওয়া হয়নি। আর ওখানে কোন প্রকার শশার চাষ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বৃ-আঙ্গারু সরকার পাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি. এর ম্যানেজার তাহেজ মুঠোফোনে জানান, তার সমিতি মিল্কভিটা থেকে সামান্য পরিমাণ জমি পেলেও কারা শসা চাষীদের ইজারা দিয়েছেন তিনি তা জানেন না। তবে তিনি শুনেছেন সমিতির সভাপতি ৮-১০ টাকা বিঘাপ্রতি ইজারা দিয়েছেন।
জানতে চেয়ে বাঘাবাড়ি মিল্ক ভিটার উপ-মহাব্যবস্থাপক ডা. মোঃ ছাইদুল ইসলামের মুঠোফোনে (0132..43677) যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, তৎকালীন পাবনা জেলার শাহজাদপুর উপজেলাধীন বুড়ি পোতাজিয়া, দখলবাড়ী, রামকান্তপুর, হাড়নি, রাউতবাড়ী, পশ্চিম খারুয়া, নাগডেমরা, বিলচান্দ, বৃ-আঙ্গারু ও রতনপুর এই মৌজাগুলোর আওতায় বিল এলাকার ১১৭৯দশমিক ৮৩ একর সি এস খতিয়ানভুক্ত খাসজমি রয়েছে।তৎকালীন জমিদার গগেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমেরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবেন্দনাথ ঠাকুর এই জমিগুলোর দখলদার ছিলেন। জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের নামে এস এ খাস খতিয়ানে রেকর্ড হয়। ১৯৮২ সালে ওই জমির মধ্যে ১০৩০ একর খাস ভূমি গেজেটভুক্ত করে গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য মিল্কভিটার অনুকূলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ইজারা প্রদান করে। সমবায় মন্ত্রণালয়, উপজেলা প্রশাসন ও মিল্কভিটার প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত কমিটি গোচারণ ভূমিগুলো মিল্কভিটার তালিকাভুক্ত প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির নামে বরাদ্দ দেয়। এই গোচারণ ভূমিতে গবাদিপশু লালন পালন করে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠানটি সমবায় ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে আসছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর