মুফতি আমানুল হক বলেছেন, আজ সন্ধার মধ্যে সাদপন্থিরা মাঠ না ছাড়লে বৃহস্পতিবার লংমার্চ করে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান দখল করা হবে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে শুরায়ী নেজাম (জুবায়ের) পন্থিদের জরুরি সাংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের মূল কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আমানুল হক বলেন, হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। সরকারের কাছে তাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিচারের দাবি জানাবো। অন্তবর্তী সরকারকে নিয়ে চক্রান্ত করছে সাদপন্থিরা। কেয়ামত পর্যন্ত সাদপন্থিদের আর কাকরাইল মসজিদে আসতে দেয়া হবে না। এখন বাংলাদেশে একটাই ইজতেমা হবে।
এদিকে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদের অনুসারীদের সবাইকে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার মাঠ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ধর্মীয় স্বার্থে কোনো পক্ষকে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয়েছে। বুধবার তাবলিগের দুই পক্ষের হতাহতের ঘটনায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়।
এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কামারপাড়া আবদুল্লাহপুর, উত্তরা, তুরাগ নদীর দক্ষিন পশ্চিম এলাকায় যেকোনো প্রকার সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এর আগে ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের পর আবারও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মাঠ ছাড়ার ঘোষণা দেন সাদপন্থীরা। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠক শেষে সাদপন্থিদের পক্ষে রেজা আরিফ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সতর্ক করে জানানো হয়েছে যে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ পরিস্থিতি এড়াতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা ও সংঘর্ষ রোধে সরকারের অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে মাঠ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রেজা আরিফ আরও বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকার মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিজ দায়িত্বে নেবে। কোনো পক্ষই মাঠে অবস্থান করবে না। উভয় পক্ষের প্রতি অনুরোধ, যেন কেউ সংঘর্ষে না জড়ায়।
এর আগে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন নিহত হন। নিহতরা হলেন- বাচ্চু মিয়া (৭০), তাইজুল (৬৫) ও বেলাল (৬০)। বাচ্চু মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামে। বেলালের বাড়ি ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকায় ও তাইজুল ইসলাম বগুড়া জেলার বাসিন্দা।
Advertisement
বুধবার ভোর ৪টার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ইজতেমার আগে আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা করার জন্য সাদ অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। আর সাদপন্থিরা যেন ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য আগে থেকেই ময়দানে অবস্থান করছিলেন জুবায়েরপন্থিরা।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার পর মাওলানা সাদ অনুসারী শত শত মুসল্লি কামারপাড়া ব্রিজ পার হয়ে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের গেট দিয়ে ময়দানে প্রবেশ করেন। এসময় ইজতেমা ময়দানের ফটকে জুবায়ের অনুসারীরা পাহারায় থাকায় তাদের মারধর করে ফটক খুলে ময়দানে প্রবেশ করেন সাদপন্থিরা। ময়দানের বিভিন্ন স্থানে ঘুমিয়ে থাকা জুবায়েরপন্থি মুসল্লিদের ওপর হামলা চালান মাওলানা সাদের অনুসারীরা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কিছু মুসল্লি আহত হন। তাদের উদ্ধার করে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর