ফেনী প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে জনগণের সারাদেশেই ব্যাপক পরিচিত হলেও প্রবাসী ও তাদের পরিবারের ভোগান্তি যেন শেষ নেই। ফেনীর বিভিন্ন ইউনিয়ন সমূহে সরেজমিন প্রত্যক্ষে প্রবাসীদের বিভিন্ন জনদুর্ভোগের চিত্র ফুটে ওঠে।
এ নিয়ে নিয়মিত তারা নিজেদের ফেসবুকে ভাব প্রকাশ করে থাকেন।ফেনীতে প্রবাসীদের অধিকার রক্ষার্থে ও পারস্পরিক সহযোগিতায় ফেনী জেলা প্রবাসী পরিবার ও ফোরাম নামে দুটি সংগঠন কাজ করে। প্রবাসীদের অনেকের সাথে প্রতিবেদকের মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে তাদের কষ্টের করুন কাহিনি সমূহ সম্পর্কে জানা যায়।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে অভিভাসন ও প্রবাসী দিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে ফেনীতে দিনব্যাপী জেলা কর্মসংস্থান অফিসের অধীনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়।দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অভিবাসন মেলা ও বিদেশগামীদের প্রিঙ্গার নেওয়া হয়।
ফেনী সদরের ছনুয়ার সরোয়ার জাহান জীবিকার তাগিদে সৌদি থাকেন আজ ৮ বছর।সরোয়ারের অভিযোগ রয়েছে পাসপোর্ট করা, প্রিঙ্গার দেওয়া, ভিসা প্রসেসিং, দালালের খপ্পরে পড়াসহ নানান অসুবিধা নিয়ে।আবার সামাজিকভাবে তার ক্রয়কৃত জায়গায় গৃহ নির্মাণের পর সেখানে তার এক চাচার ঘর নির্মাণ সহ ব্যাপক অভিযোগ করেন সরোয়ার।তিনি জানান' প্রবাসীরা বিদেশ গেলে হই আজনবী আর দেশে আসলে হই বিদেশি। প্রবাসীদের আসলে প্রকৃত দেশ কোনটা তা জানাটাই দুষ্কর। অভাবের তাড়নায় বয়স বাড়িয়ে পাসপোর্ট করতে হয় দালালের মাধ্যমে। পাসপোর্ট অফিসের হয়রানি ২৫০০ টাকা বাড়তি দিয়ে পাসপোর্ট করা লাগে।
আবার পাসপোর্ট করার পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট অফিসে অতিরিক্ত ৩০০/৫০০/৭০০ টাকা দিতে হয়। আবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট অফিসের পরে ইমিগ্রেশনের সমস্যা করে দালাল চক্র যে বিষয়ে কথা বলে বিদেশ নেন সে বিষয়ে কাজ দেন না। নির্ধারিত স্যালারি পাওয়া যায় না। কাজের ঘন্টাও ভিসা কন্ট্রাক্টের চাইতে অনেক বেশি থাকে তবে সে অনুযায়ী বেতন হয় না।
দুই তিন বছর পর পর দুই মাসের জন্য দেশে আসার সুযোগ হয়। সে সময় আসলেও জায়গা জমি বিভিন্ন সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে সামাজিকভাবে খুব সমস্যায় থাকতে হয়। দক্ষিণ গোবিন্দপুর এর মাইন উদ্দিন মাছুম জানান' দীর্ঘ ২০ বছর প্রবাসে ছিলাম।আমার নিজ জায়গায় দোকান নির্মানে ৭ বছর বাঁধাপ্রাপ্ত হই।আমার দুর্বলতা আমি প্রবাসে থাকি।আমার প্রভাব নেই।'
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি ফেনী অফিসের সহকারী পরিচালক দিদার মিয়া জানান, প্রবাসীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট জটিলতা কিংবা কোন এজেন্সির মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে জেলা অফিসে কোন অভিযোগ জানালে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে কোন দালালের মাধ্যমে কেউ প্রতারিত হলে সেক্ষেত্রে কিছু করার সুযোগ থাকে না।
প্রবাসীদের আর্থিকভাবে কোন সহযোগিতা উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবাসীরা যে আয় করে তা যদি কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে চায় সেক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো প্রবাসী চাইলে ঋণ নিতে পারে।
এ বিষয় অভিবাসন দিবসে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান 'প্রবাসীরা মানসিকভাবে ব্যাপক সমস্যায় ভুগে।প্রবাসীদের যন্ত্রণা খুবই প্রখর হয়।সামাজিক ভাবে তারা সম্মানিত ও হয় না। আমি নিজে ৩ দিন প্রবাসে একটি বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে সমস্যায় পড়েছিলাম।প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ মর্ম সিং ত্রিপুরা জানান' প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা যেকোনো অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে আমাদের প্রবাসী হেল্প ডেস্কে অভিযোগ প্রদানের জন্য অবগত করা আছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশে ৩১৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন বা ৩১ দশমিক ৭০ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন ফেনীর প্রবাসীরা।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬০৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫৫ দশমিক ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫১৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন এ জেলার প্রবাসীরা।
একই সূত্রমতে, জেলায় চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯২৮ জন ব্যক্তি কর্মসূত্রে প্রবাসে গেছেন। গতবছর এ জেলা থেকে বিদেশ যান ২২ হাজার ৮১৫ জন। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় বিদেশ হতে লাশ এসেছে ৫টি। তবে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গণনাকালে ফেনীতে ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৪৩ জন ব্যক্তি প্রবাসে ছিলেন, যা জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর