
জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারের চারমাথা জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর ধানের বাজার বসায় এলাকাটিতে দুর্ঘটনা ও যানজট লেগেইে থাকে।
এ অবস্থার মধ্যেই একপ্রকার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে পথচারী ও বিভিন্ন প্রকার ছোট-বড় যানবাহন। অন্যদিকে হাটের জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকলেও উপজেলা প্রশাসন সেখানে ধানের বাজার লাগানোর চেষ্টা করলে, ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারনে তা সম্ভব হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কালাই বাসস্ট্যান্ডে থেকে পশ্চিমপাশে প্রায় ২শ মিটার দূরে জয়পুরহাট -বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশে বিশাল জায়গা পড়ে আছে। সেখানে প্রায় ১৫ বছর পূর্বে আলুর হাটের বাজার ছিল সপ্তাহে দুইদিন। বর্তমানে জায়গাটি ফাঁকা থাকলেও কিছু স্বার্থনেষী ব্যবসায়ী পাঁচশিরা বাজারে ধানের বাজার লাগান। সেখানে সপ্তাহে সাত দিনই ভোরবেলা থেকে শুরু করে সকাল দশটা এবং অনেক সময় প্রায় বেলা এগারটা পর্যন্ত এ হাটের বাজার বসে। এর মধ্যে আমন মৌসুমে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি ও ইরি মৌসুমে ৯০ থেকে ১শ কোটি টাকা ধান বেচা কেনা হয়।
অন্যদিকে পৌরসভার হাট বাজারে রাজস্ব আদায় হয় অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা। এর পরেও সড়ক থেকে বাজারটি সরানোর কোন উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন ও পৌরসভা।
পাঁচশিরা বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক সাইফুল ইসলাম, আব্দুল কাদের, বজলু,সিরাজুল শাহজাহানসহ অনেক কৃষকের সাথে কথা হয়। তাঁরা জানান, কৃষকদের বারবার জিম্মি করে ফায়দা নেন ইজারাদার ও ব্যবসায়ী মহল । হাটের নির্ধারিত জায়গা না হলেও কৃষকদের দিতে হয় খাজনা। অন্যদিকে নানা ছলছুতায়, নিজেদের খেয়াল খুশিমতো, কৃষকদের জিম্মি করে ব্যবসায়ী মহল ধান কেনা বন্ধ করেন। ব্যবসায়ীরা কেনার সময় বস্তাপ্রতি অতিরিক্ত ১ থেকে ২ কেজি ধান বেশি নেন। কিন্তু বেচার সময় এক ছটাক ধানও বেশি দেন না।
সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক এনামূল হকসহ স্থানীয় অনেক বাসিন্দা জানান, পাঁচশিরা বাজারে রাস্তার ওপর ধানের হাট বসায় অনেক সময় দুর্ঘটনা ও জনদুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেক্ষেত্রে কালাই বাসস্ট্যান্ডে থেকে পশ্চিমপাশে প্রায় ২শ মিটার দুরে জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক সড়কের উত্তর পাশে বিশাল জায়গা পড়ে আছে। সেখানে ধানের বাজার লাগালে দূর্ঘটনা ও জনদুর্ভোগ থাকবেনা বলে তারা মত প্রকাশ করেন।
এ উপজেলার বাহিরে থেকে ধান কিনতে আসা অনেক ব্যবসায়ীরা জানান, জয়পুরহাটের কালাইকে বলা হয়, আলু আর ধান কালাইয়ের প্রাণ। কথাটি এ এলাকার মানুষের সবার মুখে মুখে থাকলেও পৌরসভার নিজস্ব কোন ধানের হাট বা বাজার না থাকায় তারা বিরুপ মন্তব্য করেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অস্বীকার করে বলেন, মহাসড়কে ধানের বাজার কেনা বেচা করলে দুর্ঘটনা ও জনদুর্ভোগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরাও চাই মহাসড়ক বাদে নিদিষ্ট একটি জায়গায় ধানের বাজার গড়ে উঠুক। তারা ধানের বাজার মূল্যে ক্রয় করবেন এবং সরকারি বিধি অনুযায়ী হাটের খাজনা দিবেন।
কালাই চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল আজিজ আকন্দ জানান, জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উভয় পাশে কালাই পৌরসভার পাঁচশিরায় ধান কেনা-বেচা হয়। এটি হাটের নির্ধারিত জায়গা নয়, সড়ক ও জনপদের জায়গা। সরকারি নির্ধারিত যে কোন স্থানে ধানের বাজার বা হাট বসুক না কেন আমরা ন্যায্য মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনব।
কালাই পৌরসভার হাট ইজারাদার রেজাউল করিম মন্ডল জানান, বিগত বছর থেকেই পাঁচশিরা বাজারে ধান কেনা বেচা হত। এ বছর পৌরসভার টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে খাজনা আদায় করছিলাম। বর্তমানে ৫ই আগস্টের পর ব্যবসায়ীরা আর খাজনা দিচ্ছে না।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক শামিমা আক্তার জাহান জানান, দুর্ঘটনা ও জনদুর্ভোগ নিরসনের জন্য মহাসড়কে ধানের বাজার বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এবং তাঁর পরামর্শক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর