সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলন কেন্দ্রীয় পরিষদের আয়োজনে ময়মনসিংহ বিভাগীয় পাঠাগার সম্মেলন অনুষ্ঠিত। বাংলাদেশকে একটি মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পাঠাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মানবিক সমাজ গড়তে পাঠাগারগুলোকে জাগাতে হবে। পাঠাগারের বই পাঠ কর্মসূচি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি জ্ঞানবিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার প্রসার ঘটাতে হবে। আঞ্চলিক লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণেও পাঠাগারগুলো ভূমিকা রাখতে পারে।
আজ শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহের মুসলিম ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের আয়োজনে ময়মনসিংহ বিভাগীয় পাঠাগার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের আলোচনায় এসব কথা উঠে এসেছে। একই সঙ্গে পাঠাগারগুলোর পাঠক–সংকট, অবকাঠামো, আর্থিক সংকটসহ নানা ধরনের সমস্যা নিরসনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবিও উঠেছে।
এই সম্মেলনে ময়মনসিংহের চার জেলার শতাধিক বেসরকারি পাঠাগারের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সম্মেলনের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ জেলার শাহেদা স্মৃতি পাঠাগার এর সভাপতি আনসার উদ্দিন খান পাঠান।সঞ্চালনা করেন সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রহমান রায়হান। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন পাঠাগার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শামীম আকন্দ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা:রাজেন্দ্র দেবনাথ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে বিকেলে ‘পাঠাগার আন্দোলনের বিকল্প ধারা:সম্ভাবনার নতুন দুয়ার’ শীর্ষক সেমিনার হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিষদের সহ-সভাপতি মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, মূলধারার বাইরে বাংলাদেশের বেশকিছু বিকল্প ধারার পাঠাগার গড়ে উঠেছে।তার মধ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার,স্টেশন পাঠাগার,পলান সরকারের বইয়ের ফেরিওয়ালা,নওগাঁর মানদার,কৃষি পাঠাগার,দেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠা সেলুন পাঠাগার,পথ পাঠাগার,পার্ক পাঠাগার,টেন বুকস লাইব্রেরি,অনলাইন পাঠাগার, পেশাজীবী পাঠাগার, ধর্মীয় উপসনালয় পাঠাগার, নৌকায় পাঠাগার, বুক ক্যাফে, প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত (ব্রেইল, অডিও বুকস ও ইশারা ভাষায় লিখিত বই) পাঠাগার এছাড়াও বিকল্প মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পাঠাগার ইতিমধ্যে পাঠকদের মধ্যে আগ্রহ গড়ে তুলছে।নানা রকম পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই পাঠাগারগুলো মূলধারার পাঠাগার হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আফজাল হোসেন,সূর্যদীঘল বাড়ি চলচ্চিত্রের পরিচালক মসিহ উদ্দিন শাকের,বই বন্ধু কাজী এমদাদুল হক খোকন,জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এআরএফবির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দিলওয়ার খান সর্বজন শ্রদ্ধেয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক আবুল কালাম আল আজাদ,সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এড.মুজিবুল হক,রংপুর বিভাগীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম দুলাল,দৃষ্টি জয়ী আশিকুর রহমান অমিত প্রমুখ।
সেমিনার পর্বের সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি আবদুস ছাত্তার খান। কাউন্সিল পর্বে শাহেদা স্মৃতি পাঠাগার এর সভাপতি আনসার উদ্দিন খান পাঠানকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিটির সভাপতি ও অদম্য '১৯ পাঠাগার এর সভাপতি তৈয়ব মৃধাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়াও ময়মনসিংহ জেলার আহবায়ক হিসেবে নির্বাচিত হোন গৌরিপুর গণ পাঠাগার এর প্রধান পরিচালক রনজিৎ কর। নেত্রকোনা জেলার ARFB গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দিলওয়ার খানকে নেত্রকোনা জেলার আহবায়ক নির্বাচিত হোন। জামালপুর জেলার রিয়াজউদ্দিন স্মৃতি পাঠাগার এর সভাপতি মোহাম্মদ ফজলুল হুদা জামালপুর জেলার আহবায়ক নির্বাচিত হোন।
এছাড়াও শেরপুরের শের আলী পাঠাগার এর সভাপতি মুন্নি বেগম শেরপুর জেলার আহবায়ক নির্বাচিত হোন।
জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গড়তে ও মানবিক মূল্যবোধ জাগাতে পাঠাগার আন্দোলনকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে পারলেই কেবল মাত্র, পাঠাগার গণ মানুষের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর