বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সাড়ে ১৫ বছর আমরা দফায় দফায় অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কিন্তু সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি আমরা ঘটাতে পারিনি। আমি গর্বিত আমাদের সন্তানেরা সেই কাজটি করেছে। আমি আমাদের সন্তানদেরকে ভালোবাসা উপহার দিচ্ছি। জাতির পক্ষ থেকে তাদেরকে স্যালুট জানাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে তারা অসাধ্য সাধন করেছে। এ রকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। আগামীর বাংলাদেশ আমরা তাদের হাতেই তুলে দিবো।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াত আয়োজিত জেলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলার আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ দেশটাকে শ্মশান-গোরস্তানে পরিণত করেছিল। এরা মাঝেমধ্যে বলতো দেশে নাকি অনাবিল শান্তি বিরাজ করছে। আমরা বলতাম শান্তি তোমরা কায়েম করেছো কবরের মতো। যেখান থেকে হাসি কিংবা কান্নার শব্দ শোনা যায় না। কবরস্থানে কোনো মানুষ থাকে না। হাসি কান্নার আওয়াজ শোনা যায় না। ২৮ অক্টোবর তারা লাশের ওপর নর্দন করেছে। তখনই তারা জানান দিয়েছিল যে, ক্ষমতায় এসে খুন-গুমের রাজ্য কায়েম করবে।
তিনি বলেন, আজকে যুবকেরা বলছে- আওয়ামী লীগ আমাদের ভোট চুরি করেছিল। তিনটা নির্বাচন আজ যাদের বয়স ৩০ থেকে ৩২ বছর; তারা একটা ভোটও দিতে পারেনি। তাদের সমস্ত ভোটকে জেনুসাইড করেছিল, গণহত্যা করেছিল। ভোটের গণহত্যা। এদের নৈতিক সাহস ছিল না দেশে থাকার। এ জন্য দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। পালাতে গিয়ে কারও কারও অবস্থা এমন হয়েছিল যে, রসিক সিলেটবাসী তাদের কলাপাতায় শুয়ে দিয়েছিল। আওয়ামীরা খুনি-সন্ত্রাসী। তারা রাজনীতিবিদ নয়। এদের বিচার বাংলার মাটিতে করতে হবে। জাতিকে এরা ৫৩ বছর বিভিন্ন কায়দায় ফ্যাসিজমের মাধ্যমে দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, মেজরিটি শক্তি, মাইনরিটি শক্তি কতভাবে যে ভাগ করেছে এরা।
তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিবেশী দেশকে বলতে চাই- আপনারা শান্তিতে থাকেন। আমাদেরকেও শান্তিতে থাকতে দেন। আপনাদের পাকঘরে কি পাকাবেন আমরা জিজ্ঞেস করি না। আমাদের পাকঘর উঁকি মারার চেষ্টা করবেন না। নিজেরা আয়নায় চেহারা দেখুন। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবক দিতে হবে না।
তিনি নিজ জেলার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অ্যাগ্রিকালচার বিশ্ববিদ্যালয় নেই; কেন? মৌলভীবাজার কী অপরাধ করেছে? তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা-বাগান রয়েছে মৌলভীবাজারে। রাষ্ট্রীয় যথাযথ পর্যবেক্ষণ না থাকায় চা শিল্প ধ্বংস হওয়ার পথে। মালিকপক্ষ চায়ের যথাযথ মূল্য পান না। শ্রমিকরাও পারিশ্রমিক পান না। তিনি নেতাকর্মীদের চারটি বিষয় তুলে ধরে এরমধ্যে নিয়ত সহি করে জ্ঞানের রাজ্যে এগিয়ে গিয়ে সাহসী হয়ে কঠোর পরিশ্রম করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
জেলার সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী ও সহকারী সেক্রেটারি হারুনুর রশিদের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাড. এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলার আমির মাওলানা হাবিুবুর রহমান।
আরও বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ জেলার আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মুতলিম, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি আহবায়ক ফয়জুল কবির ময়ূন, জেলা হেফাজতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা আব্দুস সবুর, মৌলভীবাজার জেলার নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমানসহ জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর