
পাবনার আটঘরিয়ায় জিয়াউর রহমান নামে এক ব্যক্তির ক্রয়কৃত জমিতে অবৈধভাবে জোরপূর্বক ঘর তুলে জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করলে উভয়পক্ষের কাগজপত্র যাচাই বাছাই সাপেক্ষে জিয়াউর রহমানের পক্ষে রায় দেন আদালত। অথচ আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে এখনও জবর দখল করে রয়েছেন অভিযুক্তরা। উলটো নাশকতা মামলায় জিয়াউর রহমানকে ফাঁসিয়ে দেন তারা।
মামলা ও জমির দলিল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখা যায়, আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা গ্রামের রতিপুর মৌজার আর এস খতিয়ান নং ৪৩, দাগ নং ১০৪০, জমির পরিমাণ ৪৬ শতক। তার মধ্যে পশ্চিম দিকের ১৫ শতক জমি ক্রয়সূত্রে ১৫/২০ বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছিলেন মৃত আব্দুর রহিম মোল্লার মেয়ে জয়নব খাতুন। তার কাছ থেকে সেই জমি অনেক বছর ধরে লীজ নিয়ে আসছিলেন তার ভাই শরিফুল ইসলাম রইচ। পারিবারিক বিরোধের জেরে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ওই জমির মধ্যে থেকে গাছপালা কেটে নেওয়ার পাঁয়তারা করে শরিফুল ইসলাম রইচ গং। পরে তাদের বাধা দিলে শরিফুল ইসলাম রইচ গং বেশি লোকজন নিয়ে এসে ওই জমিতে তাদের আরেক বোন ফরিদা খাতুনকে জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ করে দেন।
এ ঘটনায় একই বছরের ৩১ অক্টোবর পাবনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১ নং আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন জয়নব খাতুন। মামলা নং ৭৭৫/২০২৩। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আটঘরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আটঘরিয়া থানাকে নির্দেশ দেন। এর মধ্যে জয়নব খাতুন তার ভোগদখলীয় ১৫ শতক জমি তার আরেক ভাই জিয়াউর রহমানের কাছে ৩১ অক্টোবর রেজিস্ট্রি মূলে বিক্রি করে দেন। যার দলির নং ৩৮২৪। পরে জিয়াউর রহমান নিজ নামে ওই জমি খাজনা খারিজও করে নেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শরিফুল ইসলাম রইচ ও রেজাউল গং তৎকালীন সরকারবিরোধী নাশকতার একটি মিথ্যা মামলায় ওই বছরের ১৫ নভেম্বর জিয়াউর রহমানকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়। ১৬ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠায় আটঘরিয়া থানা পুলিশ। পরে তিনি সেই মামলা থেকে জামিন পান।
আদালতের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তার সার্ভেয়ার দিয়ে নালিশি সম্পত্তি সরেজমিন তদন্ত করান। আটঘরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার গোলাম মোস্তফা ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ওই জমি সরেজমিন তদন্ত করে এসি ল্যান্ডকে প্রতিবেদন দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন উল্লিখিত খতিয়ান ও দাগের ১৫ শতক জমির দলিলমুলে মালিক জয়নব খাতুন। তিনি তার ভাই জিয়াউর রহমানের কাছে হস্তান্তর করেছেন। কিন্তু সরেজমিন তদন্তকালে বিবাদীপক্ষ শরিফুল ইসলাম রইচ গংদের বারবার তাদের স্বপক্ষে জমির কাগজপত্র দাখিল করতে বলা হলেও তারা কোনো দলিল বা কাগজপত্র দাখিল করতে পারেন নাই। নালিশি জমিতে তাদের আরেক বোন ফরিদা খাতুন জোরপূর্বক আধা পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন।
জমির মালিক ভুক্তভোগী জিয়াউর রহমান জানান, ’এ ঘটনায় আমি ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ বন্ধের জন্য আটঘরিয়া থানায় একটি অভিযোগ দেই। আমার কেনা জমিতে ফরিদা খাতুন তার ভাই শরিফুল ইসলাম রইচ ও সন্তানদের সহায়তায় জবর দখল করে জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ করছেন এবং বিভিন্ন গাছপালা কেটে নিয়েছেন। এতে আমি বাধা দিতে গেলে তারা উলটো অকথ্য গালিগালাজ ও হুমকি ধামকি দেন। এর আগেরদিন ৩ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে আটঘরিয়া থানা পুলিশ আমাদের উভয়পক্ষকে ডেকে নিয়ে জমি আমাকে ছেড়ে দিতে তাদের নির্দেশ দেন ওসি। তারাও জমি ছেড়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করে । কিন্তু বাড়ি ফিরে আর জমি ছেড়ে না দিয়ে নানারকম তালবাহানা শুরু করেছে। সকল দলিল কাগজপত্র আমার পক্ষে, আদালতের রায় আমার পক্ষে। তারপরও তারা আমাকে জমি বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। সেখানে গেলেই মারমুখী হয়ে আসে। আমি এর প্রতিকার চাই।’
অভিযুক্ত ফরিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা ভাইবোন, ওই জমি জিয়াউর কেনার আগেই ঘর তুলেছি। তাকে বারবার ওই জমিটা আমাকে বোন হিসেবে দিয়ে দিতে অনুরোধ করছি। কিন্তু দিচ্ছে না। এখন এত টাকা খরচ করে ঘর তুলেছি, কিভাবে ভেঙ্গে সরে যাবো। আমি অসুস্থ মানুষ।’
এ বিষয়ে আটঘরিয়া থানার ওসি শফিকুজ্জামান বলেন, ‘জমি আদালতের রায় অনুযায়ী জিয়াউর রহমান মালিক। আদালতের নির্দেশে আমরা জমিতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছি। বিবাদী পক্ষকে থানায় ডেকে এনে জমি ছেড়ে দিতে বলেছি। কিন্তু তারা ছাড়ছে না। জমিতে অনেক টাকা খরচ করে ঘরও তুলে ফেলেছেন তারা। মানবিক একটা বিষয়। এখন পুলিশতো আর ঘর ভেঙ্গে সরিয়ে দিতে পারে না। জমির মালিক আবার আদালতে উচ্ছেদের মামলা করলে সেখান থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নিবেন।’
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর