• ঢাকা
  • ঢাকা, শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৭ মিনিট পূর্বে
সাহিদুজ্জামান সাহিদ
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:০৮ দুপুর
bd24live style=

'হাজারি গুড়' উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

অসময়ে অতিবৃষ্টি ও হঠাৎ শীতের প্রকোপে মানিকগঞ্জে খেজুরের রস সংগ্রহে গাছিরা পিছিয়ে পড়েছে। এতে করে এবছর প্রভাব পড়েছে রস উৎপাদন ও গুড় তৈরির লক্ষ্য মাত্রায়। 

অন্যসব জেলার মত বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের গুড় উৎপাদন না হলেও মানিকগঞ্জের 'হাজারী গুড়' সারা দেশব্যাপী সমাদৃত; যা শুধুমাত্র মানিকগঞ্জেই হয়। এই গুড়ের চাহিদা জেলা এবং সরা দেশজুড়ে। বিক্রিও হয় চড়া দামে। রস এবং গুর উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ায় গাছিরা হাজারী গুড়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, জেলায় খেজুর গাছের সংখ্যা ৩৩ হাজার ২৭৫ টি এর মধ্যে রস সংগ্রহ করা যায় ১৯ হাজার ২২৩ টি গাছ থেকে। দশ বছর আগে খেজুর গাছের সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ৫৬০টি। গত ১০ বছরে গাছ কমেছে ১৮ হাজার ২৮৫ টি। অতএব গড়ে প্রতিবছর ১৮'শ ২৯ টি করে খেজুর গাছ কাটা পড়েছে। এ বছর জেলায় লাল গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪'শ ৪২ মন এবং হাজারি গুড় ২৩৮ মন।

জেলার শতাধিক পরিবার এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এর ভিতর হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা এলাকার ২৫ টি পরিবার বিশেষ এই হাজারি গুড় তৈরি করে থাকে। বাকিরা তৈরি করে নাম্বারী গুড় যা বাজারে লাল গুড় নামে পরিচিত। এই লাল গুড় গুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় মানভেদে কেজি প্রতি ২'শ থেকে ৫'শ টাকা পর্যন্ত। উৎপাদিত এই হাজারী গুড় অগ্রিম ওয়ার্ডারে প্রতি কেজি ১৬'শ থেকে ২ হাজার টাকায় কিনতে পারেন ক্রেতা।

অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাস গাছিদের রস সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। কিন্তু এ বছর অগ্রহায়নের শেষ অংশে এসে রস সংগ্রহ শুরু হয়েছে, তবে সেটাও পরিমাণে অনেক কম। এতে করে বিগত বছরগুলোর তুলনায় প্রায় এক মাস রস সংগ্রহে পিছিয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন গাছিরা।

জমি কেনাবেচা, বসতবাড়ি নির্মাণ, গাছের অতিরিক্ত বয়স হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা কমে আসা, গাছ নিধন- এ সকল কারণে জেলায় আশঙ্কাজন হারে খেজুর গাছ কমেছে। বর্তমানে যে রস পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে স্থানীয় বাজারে চাহিদা মেটানোও সম্ভব নয়। নতুন করে গাছীরা আর খেজুর গাছ রোপন করছে না। কোন এনজিও বা সামাজিক সংগঠন প্রাচীন এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে তাদেরও কোন সহযোগিতা বা তৎপরতা জেলাজুড়ে দেখা যায়নি।

গেল বছর হরিরামপুর উপজেলাসহ জেলাব্যাপী ৫ লাখ খেজুর গাছের চারা রোপনের প্রকল্প হাতে নেয় জেলা প্রশাসন। তবে জেলা প্রশাসকের চলে যাওয়ার পর সে প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। সে সময় এ প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলেও তৎকালীন জেলা প্রশাসক কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি। এই প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছিল প্রায় তিন কোটি টাকা।

জেলার হরিরামপুর এলাকার সিদ্দিক গাছি ১২০ টি গাছ থেকে এ বছর রস সংগ্রহ করছেন সরেজমিনে কথা হয় তার সাথে তিনি বলেন, 'প্রতিবছর আমরা অগ্রাহায়নের শুরুতে রস সংগ্রহ শুরু করলেও এ বছর অসময়ে বৃষ্টির কারণে খেজুর গাছ পরে কাটতে হয়েছে ফলে রস সংগ্রহ একমাস পিছিয়েছে। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত আমরা রস সংগ্রহ করতে পারি। আগে চার মাস পরলেও এ বছর বৃষ্টির কারণে তিন মাস রস সংগ্রহ করতে পারব। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর গুড় উৎপাদন অনেক কমে আসবে। আর হাজারিগর বানাতে যে রসটা প্রয়োজন সেটা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। শীতের প্রকোপ বাড়লে যে রসটা পাওয়া যাবে সেটা দিয়েই তৈরি হবে হাজারী গুড়।'

একই এলাকার রহিজ হাজারী বলেন, 'এবছর বৃষ্টির কারণে আমরা সময় মত গাছ কাটতে পারিনি। আমাদের রস সংগ্রহ শুরু হয়েছে তবে হাজারীবুর তৈরিতে যে রসটা প্রয়োজন সেটা এখনো পাচ্ছিনা। এখন যে রসটা পাচ্ছি এটা দিয়ে নাম্বারী গুড় তৈরি হচ্ছে। এবার পিছিয়ে পড়ার কারণে হাজারীঘোর উৎপাদন অন্যসব বছরের তুলনায় কমবে।'

হাজারী পরিবারের সদস্য জাহিদ হাজারী বলেন, 'ঝিটকা এলাকার শতাধিক পরিবার এই হাজারীঘোর তৈরি করত। কালের বিবর্তনে এখন সর্বসাকুল্যে ২৫ টি পরিবার এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত আছে। আগে গাছও ছিল অনেক মৌসুমে হাজার মন হাজারী গুড় উৎপাদন হতো এ এলাকায়। গাছ এবং গাছী কমে যাওয়ায় হাজারী গুড় উৎপাদন কমে এসেছে। নতুন করে গাছ রোপন, গাছি পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণ এবং সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে জেলার এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব। নয়তো আগামী এক থেকে দেড় যুগ পর হাজারী গুড় জেলা তথা সারা দেশ থেকেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।'

গাছিরা বছরজুড়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও শীতে খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। স্থানীয় বাজারগুলোতে যে গুড়গুলো উঠেছে তার অধিকাংশই নিম্নমানের। যা ফ্লেভার, চিনি, আটা মিশিয়ে তৈরি করা হয়। কিছু ব্যবসায়ী নিম্নমানের এ গুড় ইতোমধ্যেই স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ঝিটকা বাজারের গুড় ব্যবসায়ী ওয়াসিম ভূঁইয়া জানান, 'স্থানীয় গাছিদের কাছ থেকে লাল গুড় সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন তিনি। মানভেদে এ গুড় ৩'শ থেকে ৫'শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অন্যসব বছর ডিসেম্বরের মাসের শুরু থেকেই হাজারিগুর বিক্রি শুরু হয় বাজারে তবে এবার এখনো গাছিদের হাজারি গুড় পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য এখনো পর্যন্ত ব্যবসা জমেনি।একমাত্র ভরা শীতেই এই হাজারী গুড় তৈরি হয় এবার পিছিয়ে পড়ায় হাজারী গুড় উৎপাদন অনেক কমে আসবে। আমাদের ব্যবসাও কম হবে।'

বাজারের আরেক ব্যবসায়ী শফিক বিশ্বাস বলেন, 'প্রতিবছর আমরা এই হাজারি গুড়ার জন্যই অপেক্ষা করি। এ গুড়ের সারা দেশব্যাপী চাহিদা। আমাদের মোবাইল নাম্বারে সারাদেশ থেকে ফোন আসে অগ্রিম অর্ডারে ১৬'শ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করি এই গুড়।'

বাজারে গুড় কিনতে আসা ক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, 'বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ। এফাঁকে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসছেন। শীতের পিঠাপুলি খেতে গুড় কিনতে এসেছি। হাজারী গুড় কিনতে এসেছিলাম কিন্তু বাজারে নেই ; পাওয়া যাচ্ছে লাল গুড়। এই গুড়ে আগের মত সেই সুগন্ধ নেই। দাম অনেকটাই বেশি মনে হচ্ছে।'

হাজারি গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কথা হয় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদের সঙ্গে তিনি বলেন, 'বৃষ্টিতে গাছিরা রস সংগ্রহে পিছিয়ে গেছে। তবে শীতের শেষ অংশে গাছিরা এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। হাজারী গুড় তৈরিতে যেহেতু শীতের প্রকোপ বেশি প্রয়োজন শেষ অংশে যদি শীতের প্রকোপ কমে আসে তাহলে কিছুটা প্রভাব পড়বে। হাজারী গুরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে লাল গুড় লক্ষ মাত্রার অধিক উৎপাদন হবে।'

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com