পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নদীকে একটি সুন্দর প্রাণ ব্যবস্থা হিসেবে দেখতে হবে। আমরা কি নদীর সৃষ্টি করতে পারি? যদি সৃষ্টি করতে না পারি, তাহলে কেন ধ্বংস করি।
নদীগুলোকে শিল্প কারখানার ভাগাড়ে ভাগাড়ে পরিণত করার কোন অধিকার কোন শিল্প মালিকদের দেয়া হয়নি। বিশ্বের কোথাও কোন দেশে কোন মালিককে এই অধিকার দেওয়া হয়নি। তার ব্যবসায়িক লাভের জন্য বজ্র নদীতে ফেলার লাইসেন্স দেয়া হয়নি।
অনেক কিছুর বিকল্প তৈরি করা যায় কিন্তু নদীর বিকল্প তৈরি করা সম্ভব নয়। প্রকৃতির সাথে কখনো লড়াই করতে নেই প্রকৃতির সাথে লড়াই করে জিততে পেরেছে এরকম কোন ইতিহাস নেই। নদী বাঁচাতে প্রয়োজনে আমরা দু চারটে শিল্প কারখানা বন্ধ করে দিব।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে গাজীপুর শহরের পিটিআই অডিটোরিয়ামে তরুণদের নদী ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে সচেতন করা এবং তাদের সম্মিলিত শক্তি নদী রক্ষায় অনুষ্ঠিত যুব সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যত যাতায়াত করে তার অর্ধেকের বেশি নদীপথে যাতায়াত করে। এখনো মরে যাওয়া দখল হওয়া নদীগুলো আমাদের যাতায়াতের অন্যতম ভূমিকা পালন করে। আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের কারণে জলবায়ুর মতো ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখে তরুন প্রজন্ম। আগামী প্রজন্ম যাদের জন্য আমরা গাড়ি-বাড়ি করি, টাকা জমাই, তারা আগামী প্রজন্ময় ভয়ংকর সমস্যার সম্মুখীন হবে।
পরিবেশের যে বিরূপ প্রভাব সেটির কবলে পড়বে। আগামী প্রজন্মকে যদি একটি দূষণমুক্ত নদী না দিতে পারি তাহলে ওরা পানি পাবে কোথায়, মাছ পাবে কোথায়? মাছ'ই যদি না পায় তাহলে ওরা মাছে ভাতে বাঙালি না হয়ে ফার্মের মুরগি আর ভাতে বাঙালি হবে!
তিনি আরও বলেন, এই প্লাস্টিকগুলো নদীতে পড়ে। ফলে কোন কোন নদীতে তিন থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত প্লাস্টিকের আস্তর পড়ে যায়। যেগুলো আর পরিষ্কার করা সম্ভব হয়না।
একটি প্লাস্টিকে যে পরিমাণ কেমিক্যাল দেওয়া হয়, কিন্তু রিসাইকেল করার সময় কেউ চিন্তা করে না যে এই কেমিক্যাল গুলো কি হবে। এই প্লাস্টিকগুলো নদীতে গিয়ে ভেঙে ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক হয়। এই প্লাস্টিকগুলো মাছ খায়। ফলে আমাদের রক্তে ও মায়ের দুধে মিশে যায়। এগুলোকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
পলিথিনের ব্যাগের বিষয়ে বলেন, আমাকে অনেকেই বলে প্লাস্টিকের ব্যাগতো এখনো বন্ধ হয়নি। আমি বলি, আপনি যখন বাজারে যান দোকানদার যখন আপনাকে পলিথিন ব্যাগ দেয় আপনি ওটা নেন৷ আপনি ক্রেতা হিসেবে বলেন এটা নিব না, এটা নিষিদ্ধ ২২ সাল থেকে। আপনার বাবা দাদারা চটের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন।
আপনি কেন বাসায় থেকে একটি চটের ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন না। ক্রেতাদের বলতে হবে আমরা এটি নেবো না। দোকানদার দিতে চাইলেও ক্রেতারা যদি না নেয় তাহলে অনেকটা রোদ হবে। ক্রেতাদের প্লাস্টিক ব্যবহারের প্লাস্টিক ব্যবহারে অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনারা দোকানদারদের বলেন এটা শুধু নিষিদ্ধ তাই নয় এটি আমার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
সরকার এই পলিথিন সরানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে ক্রেতাদেরকেও সচেতন হতে হবে। তরুণ প্রজন্ম হিসেবে আপনি প্লাস্টিকে বর্জন করুন এটি ব্যবহার বন্ধ করে দিন পরিবর্তন চাইলে আগে আমাদের সবাইকে পরিবর্তন হতে হবে।
নদী দূষণ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা নদীকে অনেকগুলো কারণে দূষণ করি। তারমধ্যে তিনটি বড় কারণে বেশি দূষণ হয়। একটি হচ্ছে শিল্প দূষণ, সিটি কর্পোরেশ-পৌরসভার বর্জ্য ও কারখানার পয়োবর্জ্য। একসঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক দূষণ।
নতুন প্রজন্মদের উদ্দেশ্য বলেন, উন্নয়নটাকে নতুন প্রজন্ম হিসেবে নতুন ভাবে দেখতে হবে। আমাদের বাতাস পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাস। আমাদের নদী গুলো দূষণের মধ্যে অন্যতম। যে উন্নয়ন আপনার বাতাসকে দূষিত করে, আপনার নদীকে মেরে ফেলে , যে উন্নয়ন আপনার কৃষি জমি কেড়ে নেয়, আপনার মায়ের দুধের সাথে মাইক্রগ্রাম মিশে যায়। সে উন্নয়ন আসলে উন্নয়ন নয়।
আমাদের দেশে একটু সময় এসেছে উন্নয়নকে নতুনভাবে দেখার। আমরা বড় বড় শপিংমল ফ্লাইওভারকে উন্নয়ন কথা বলেছি। আপনারা তা বলবেন না। আপনাদের উন্নয়নের সংজ্ঞায় দূষণমুক্ত প্রবহমান নদী থাকবে, আপনাদের উন্নয়নের সংজ্ঞায় বন থাকবে, বন্য পানি থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ৮৮ একর বনভূমি গত ৫ আগস্টের পর বেদখল হয়েছে। এগুলো ফিরিয়ে আনাটা ততটা সহজ ও বাধাহীন নয়। তবে যত বাধা দেওয়াই হোক কোন বাধাই ধোপে টিকবে না! প্রথম দফায় ৮৮ একর বনভূমি অবশ্যই দখলমুক্ত করা হবে।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেনের সঞ্চালনায় শুরুতেই ভাচ্যুয়ালী বক্তব্য রাখেন গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট সেন্টার মালেশিয়ার ম্যানেজার ড. কালিদাসান কালিসাম।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, বাংলাদেশ কাটার সাকশন ড্রেজার ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বশির আহমেদ, বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনের সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না, ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক ড. সোহরাব হোসেন প্রমুখ।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর