
চুয়াডাঙ্গায় সার সরবরাহ স্বাভাবিক করতে নানামুখী উদ্যোগ নিলেও এখনও সংকট কাটেনি। আজ পর্যন্ত ডিলারদের কাছে মিলছে না চাহিদামতো নন-ইউরিয়া সার। তবে আগের মতোই অতিরিক্ত দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সার পাচ্ছেন চাষীরা। কৃষকদের অভিযোগ, সারের কৃত্রিম সংকটে ভরা মৌসুমে গোলকধাঁধায় পড়েছেন তারা। তবুও বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামেই সার কিনতে হচ্ছে। এতে যেমন বাড়ছে আবাদি খরচ তেমনি দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে ভুট্টা চাষের তোড়জোড় শুরু হলে জেলা জুড়ে নন- ইউরিয়া সারের সংকট তীব্র হয়। সরকারি ডিলারদের কাছে যখন ভর্তুকি মূল্যে সার পাওয়া যায় না তখন অতিরিক্ত মূল্যে খুচরা ব্যবসায়ী দরে কাছে পাওয়া যায় সার। এমন পরিস্থিতিতে সার সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় সার ডিলারদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সার সংকটকে পুঁজি করে অতিরিক্ত মূল্য আদায় না করতে বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন স্বয়ং জেলা প্রশাসক। কিন্তু এরপরও সার সংকট কাটেনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় রবি মৌসুমের চাষাবাদে সারের চাহিদা বাড়ে। চলতি মৌসুমে ৯৪ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে চাষ শুরু হয়েছে। এসব জমির অধিকাংশ ক্ষেতে এখন মাঠের পর মাঠ ভুট্টা চাষ করা হয়। ভুট্টা চাষের শুরুতে সারের প্রয়োজন হয় বেশি।
কৃষকদের অভিযোগ, ডিলারদের কাছে গেলে চাহিদা মতো সার পাওয়া যায় না। বিঘাপ্রতি জমির জন্য ১০ কেজি সার দিচ্ছে। তাতে আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার খুচরা দোকান থেকে সার পাওয়া গেলেও দাম ৩-৪শ টাকা বেশি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বেলগাছি গ্রামের কৃষক শান্ত রহমান বলেন, প্রয়োজনের সময় সার পাচ্ছি না। আবার অপ্রয়োজনে সারের সংকট নেই। প্রতিবছরই এই সময় কমবেশি সারের সংকট দেখা দেয়। তবে এবার এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
আরেক কৃষক রফিক হোসেন বলেন, ভুট্টা চাষের সময় প্রচুর পরিমাণ সারের প্রয়োজন হয়। না হলে ফলন ভাল হয় না। কিন্তু সরকারি ডিলাররা সে পরিমাণ সার দিতে পারছে না। খুচরা ব্যবসায়ীরা যদিও বিক্রি করছে কিন্তু সেখানে দাম বেশি। যেখানে ডিলাররা সার দিতে পারছে না, সেখানে খুচরা ব্যবসায়ীরা ঠিকই সার মজুদ করে রেখেছে। তাহলে খুচরা দোকানিরা সার কোথা থেকে পাচ্ছে?
খুচরা ব্যবসায়ীদের যুক্তি, সারের সংকট নেই। অন্য স্থান থেকে সার নিয়ে এসে চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সারের দাম কিছুটা বাড়তি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিসিআইসি সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী বলেন, রবি মৌসুমে ডিএপি এবং এমওপি সারের চাহিদা বাড়ে। চাহিদা মতো সার না পাওয়া সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ বছরে যে পরিমাণ সারের চাহিদা পাঠানো হয়েছিল তার তুলনায় আমরা সার পেয়েছি ৫৫-৬০ শতাংশ। ফলে একটি সংকট শুরু থেকেই রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, সরকার কৃষকদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে সার দিচ্ছে। সার ক্রয়-বিক্রয়ে কোন কারসাজি বা সিন্ডিকেট করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিরবিচ্ছিন্নভাবে সকল কৃষকদের মাঝে সার সরবরাহ করার জন্য কাজ চলছে। সংকট দিনে দিনে কেটে যাচ্ছে। আর কদিন পর সার সংকট থাকবে না।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর