
আগাম বন্যার আশঙ্কা নিয়ে সুনামগঞ্জে আবারও বোরো ধানের আবাদ শুরু করেছে হাওর পাড়ের কৃষকগণ। তবে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় চিন্তিত তারা।
এ বছর এব্যাপারে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে বলে জানিয়েছেন হাওর পাড়ের কৃষকগণ। তবে হাওর থেকে পানি দ্রুত নামায়,বাঁধ সংস্কারে মাটির সংকটের কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এদিকে হাওর বাঁচাও আন্দোলন বলছেন,গত ১৫ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের উদ্বোধন হলেও এটা ছিল লোক দেখানো।
এখনও পিআইসি গঠিত হয়নি আর কবে সব পিআইসি গঠিত হবে এবং ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হবে,তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আর পিআইসি গঠন করা হয়েছে সে গুলোতেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এদিকে হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত ও নির্মাণকাজ কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ৩০নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন,১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু ও ২৮ফেব্রুয়ারি কাজ সম্পন্ন করার নিয়ম রয়েছে।
হাওর পাড়ের কৃষকেরা জানিয়েছেন,নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু ও শেষ করতে না পারলে ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কারণ হিসাবে তারা জানিয়েছেন,গত ২০১৭সালের মার্চ মাসের শেষ ও এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢল ও অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় জেলার সবকটি হাওর পানিতে তলিয়ে শতভাগ বোরো ফসলডুবিতে হাহাকার সৃষ্টি হয় হাওর জুড়ে।
পরে ঠিকাদারি প্রথার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে তদন্তে সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক একাধিক তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়।
২০১৮সাল থেকে নীতিমালা অনুযায়ী হাওরের কৃষকদের সমন্বয়ে গঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির(পিআইসি)মাধ্যমে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন হয়ে আসছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানাগেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে প্রায় ৭০০ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৫৯৬টি। আর জেলার ১২টি উপজেলায় ১৯০টি (পিআইসি) প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
এ বছর জেলায় ১২৫ কোটি টাকায় ৫৩ হাওরের ৫৩৪ কিলোমিটার বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ক্লোজার বা বড় ভাঙ্গন রয়েছে ১০৫টি।
টাংগুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক জহির উদ্দিনসহ অনেক কৃষক জানান,বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ গুলো সঠিক ভাবে দ্রুত নির্মানে যদি কোনো কারনে গাফিলতি করা হয় আর ফসল ডুবির ঘটনা ঘটে তাহলে তাদের কষ্টের শেষ থাকবে না। পিআইসি গঠনে দীর্ঘ সূত্রতাসহ নানা কারণে বাঁধের কাজ পিছিয়ে যাওয়ায় এক মাত্র বোরো ফসল কেটে গোলায় তোলার সময় এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান জানিয়েছেন,ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানিয়েছেন,পিআইসি গঠনে কঠোর নজরদারি ও কোনো বির্তকিত ব্যক্তিদের পিআইসিতে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই,তেমনি কাজে অনিয়ম সহ্য করবো না। আর নীতিমালার আলোকেই আমরা সব কাজ করছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন,হাওরে পানি বেশি থাকায় এবং মাটির সংকটের কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। চলতি মাসেই সব কমিটি গঠন করে কাজও শুরু হবে। জেলা প্রশাসক ও ফসল রক্ষা সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি ড.মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানিয়েছেন,ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে কোনো অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর