উভয় পক্ষকে নিজ দপ্তরে ডেকে একটি পক্ষকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটকের ভয় দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকা জমিতে অপর পক্ষকে ৪ মাস চাষাবাদ করার অনুমতি দেয় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার দেবনাথ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার দেবনাথ এর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আতিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। গত ৭ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। তিনি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দোগাছি মৌজায় অবস্থিত মরহুম মেজর মোহাম্মদ সাখাওয়াত আলীর ফার্ম ম্যানেজার (মেজরের ফার্ম) হিসেবে কর্মরত।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মরহুম মেজর মোহাম্মদ সাখাওয়াত আলী ১৯৯৮ সালে সাবেক ফুড কন্ট্রোলার মো: আব্দুস সাত্তার এবং হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক আফরোজা নাহার গুলসহ এলাকার অন্যান্য ব্যক্তির নিকট থেকে মোট ৪৭ দাগে ৩২ একর ৪২ শতক জমি ক্রয় করে একটি কৃষি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন-যা এলাকায় মেজর সাহেবের কৃষি ফার্ম নামে পরিচিত। বর্তমানে এই ফার্মের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আতিকুর রহমান।
সবকিছু ঠিকমতো চললেও ঝামেলা বাঁধে করোনাকালীন (২০২০ সালে) সময়ে। এসময় জমির অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে দেওয়া হলে জমি জবর দখলকারীরা আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন, যার নং-৩১৬/২১ ও ৩১৭/২১। পরবর্তীতে আদালত ২৫/০৯/২০২২ সালে দুটি মামলাই খারিজ করে দেয়। মামলায় হেরে যাওয়ায় বাদিরা জমি দখলের জন্য জঘন্য কৌশল হিসেবে বিচার বিভাগ থেকে বরখাস্ত এবং বিতর্কিত কর্মচারী সবিব দত্ত (যিনি ছাত্র আন্দোলনে নাশকতার দায়ে ৪১ দিন জেল খাটা আসামি ও ভূমি দস্যু) এবং আরও কয়েকজন যেমন- বিদ্যা বর্মন, নরেশ বর্মন, প্রফুল্ল, উপল বর্মন মিলে রাতের আঁধারে গত ১১.১১.২২ ইং তারিখে সেখানে একটি ঘর নির্মাণ করেন এবং সাইনবোর্ডে লিখেন “দোগাছি ক্যাথলিক মিশন”-স্থাপিত-১৯৯৯ সাল।
এ ঘটনার পর বিষয়টি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ও তদন্তে নিশ্চিত হন সেটি ফাঁকা জমি, এখানে কোন ধরনের গীর্জা ছিল না। পরে তারা সেটি সরিয়ে নিতে তাদের অনুরোধ করেন। এদিকে তারা সেটি অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে নিজেরাই তা ভাঙচুর করেন ও এলাকবাসির নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। তারা সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দেন। কিন্তু পরবর্তীতে বালিয়াডাঙ্গী থানা ও পিবিআই তদন্তে মেজরের ফার্মের লোকের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় মামলা নিষ্পত্তি করে উলটো বাদির বিরুদ্ধেই ২১১ ধারায় চার্জশিট প্রদান করা হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, জমি দখলকারীরা সংখ্যালঘু পরিচয়ে দিয়ে একরে পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে সাধারণ মানুষকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে। এমনকি এসব ভূমিদস্যুরা তাদের পক্ষে তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়ায় পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি ও বিব্রত করছে।
এছাড়াও গত ২৬.১০.২৪ তারিখে পুনরায় তারা রাতের আঁধারে ফার্মের জমিতে একটি কালি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। আদালতের নির্দেশ থাকার পরও সেই মন্দির অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে পাকা ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। ফলে এ নিয়ে এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবনতি ঘটছে। এছাড়াও আদালতের নির্দেশে উক্ত জমিতে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকলেও তা উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার একক ক্ষমতাবলে বিরোধী পক্ষীয়দের ৪ মাস হালচাষ করার অনুমতি দেওয়ায় মৌজায় অবস্থিত মহাজেরের সম্পত্তিতে বিশৃঙ্খলা ও ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হবে।
অভিযোগে আরও জানানো হয়, গত ৬ জানুয়ারি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার কার্যালয়ে ডেকে অভিযোগকারী আতিকুর রহমানকে বলেন, তোমাদের কথা হবে না, আমি যেটা নির্দেশ দিবো তার উপর কোন কথা হবে না। আর যদি কথা বলো, তাহলে তোমার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তোমাকে জেল হাজতে পাঠাবো।
এ ব্যাপারে জানতে মেজরের ফার্মের ম্যানেজার ও অভিযোগকারী আতিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা ৪৭ দাগে ৩২ একর ৪২ শতক জমির বৈধ মালিক হওয়া সত্ত্বেও বিবাদিরা বিতর্কিত ব্যক্তি সবীব দত্তের ফাঁদে পড়ে আমাদের বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা দায়ের করে ও ২০-২৫টি অভিযোগ করে। আমরা সব মামলাতেই একের পর এক জিতলেও তার ফাঁদে পড়ে আবারও নতুন করে মামলা করে বিবাদিরা।
বর্তমানে এ জমিতে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকলেও ইউএনও মহোদয় আমাকে আটকের ভয় দেখিয়ে জোর পূর্বক সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়ে অমীমাংসিত জমিতে বিরোধী পক্ষকে ৪ মাস চাষাবাদ করার অনুমতি দেন-যা আইন বহির্ভূত। আমি এ অন্যায়ের সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার দেবনাথ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখানে উভয় পক্ষকে যে যার অবস্থানে রয়েছে সে অবস্থানে থেকে চাষাবাদের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। তবে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। এদিকে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকাবস্থায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি শুনেছি ১৪৪ ধারা উঠে গেছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর