• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৫ ঘন্টা পূর্বে
আব্দুল্লাহ আল ইমরান
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:২৮ বিকাল
bd24live style=

৫ তলা ছাত্রীনিবাসে থাকতে দেওয়া হয়না কাউকে

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সুন্দরবন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শেখ খালিদ আহম্মেদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, জাল সনদে শিক্ষক নিয়োগ, স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। 

প্রভাবশালী এই অধ্যক্ষের বিচারের দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সভাপতির বরাবর আবেদন করেছেন কলেজের শিক্ষক ও স্থানীয়রা। নবনিযুক্ত সভাপতি বলছেন, তদন্ত কমিটি গঠন করে অনিয়ম পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ খালিদ আহম্মেদ অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কলেজের কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয় না। কোনো স্টক রেজিস্ট্রারও নেই এই কলেজে। ২০২৪ সালে কলেজের বালি ভরাটের জন্য দেড় লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করলেও, কোন কাজ না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ দিয়েছেন। 

আরোও অভিযোগ রয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে নামে বেনামে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ নিয়ে, হিন্দু শিক্ষার্থীদের মাঝে বণ্টন না করে অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেছেন। টিউশন ফি‘র টাকা শিক্ষকদের মাঝে বিতরণ না করে আত্মসাৎ করে আসছেন। উপবৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা কেটে রাখেন অধ্যক্ষ। কলেজের ২৭টি দোকানে ভাড়া উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন তিনি।নিজের আত্মীয়দের কাছে বিনা ভাড়ায় দোকান বরাদ্দ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের পদে থাকা এবং তৎকালীন সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় চরমভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে দাবি শিক্ষকদের।

নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়েয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। কলেজে বিএম শাখায় অমিত নামের এক ব্যক্তিকে বড় অঙ্কের টাকার বিনমিয়ে জাল সনদে চাকুরি প্রদান করেন। পরবর্তীতে অমিতের নামে সনদ জালিয়াতির মামলা করা হয়। একই শাখায় সুবর্না দাশ ও উৎপল নামের দুইজনকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করেন।

২০১৮ সালে দর্শন, অর্থনীতি, গনিত ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে চার জন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করেন। এর মধ্যে গণিত বিষয়ের শিক্ষক আল আমিন ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে কবিতা সানাকে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ২০১৭ সালে নিয়োগ দেখিয়ে পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি এবং রেজুলেশন জালিয়াতি করে এমপিওভুক্ত করেন। তবে দর্শন বিষয়ে আব্বাস ও অর্থনীতি বিষয়ে ফাহিমা খাতুনকে এমপিওভুক্ত করাননি। বরং শিক্ষক নিয়োগ থাকা সত্ত্বেও এনটিআরসিএ-তে পদ দুটো শূন্য দেখিয়ে দুইজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।

আকবর আহম্মেদ নামের এক শিক্ষক ২০০২ সালে কয়েকমাস চাকুরি করে, যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে চলে যায়।সেখানে এক শিক্ষার্থীকে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য, কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়। মাস খানেক জেল খেটে আবারও সুন্দরবন মহিলা কলেজে ফিরে আসেন। অধ্যক্ষকে ২ লক্ষ এবং সুভংকর নামের এক শিক্ষককে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক হারুণকে ম্যানেজ করে রাতারাতি সহকারী অধ্যাপক হয়ে যান। যা নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।

এদিকে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপার জান্নাতুল মাওয়ার দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানের ২১২ শয্যা বিশিষ্ট ৫তলা ছাত্রী নিবাসে কোন ছাত্রী থাকেন না। ২০১৩ সালে স্থাপিত বিলাশ বহুল এই ভবনে শিক্ষার্থী না থাকলেও, উপাধাক্ষ ইজারাদার নাহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী হোস্টেল সুপার জান্নাতুল মাওয়া থাকেন। ভবনের খাট, চেয়ার, টেবিল ও ম্যাট্রেস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সংরক্ষণের অভাবে। সম্প্রতি স্থানীয় ব্যক্তিরা ছাত্রীনিবাসে শিক্ষার্থী না থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।  

কলেজের শিক্ষার্থী জেরিন বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ স্যার নানা অনিয়ম করেন। এতবড় হোস্টেল থাকার পরেও, শিক্ষার্থীদের থাকতে দেওয়া হয় না। তদন্তপূর্বক এসব অনিয়মের বিচার চাই।

কলেজের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগে দুইজন শিক্ষার্থী হোস্টেলে থাকার জন্য অধ্যক্ষের কাছে গেলে, তিনি বলেন, এখানে থাকার পরিবেশ নেই। তোমরা অন্য ব্যবস্থা কর। অথচ হোস্টেলে শিক্ষার্থী থাকার সব ব্যবস্থা রয়েছে।

কলেজের গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন,  নিয়োগ বাণিজ্য করে অধ্যক্ষ লাখ লাখ টাকা কামিয়েছেন। তার এসব কাজে সহযোগিতা করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, খুলনা অঞ্চলের পরিচালক হারুণ-অর-রশীদ ও সহকারী পরিচালক মো. ইনামুল ইসলাম।

নিয়োগ পেয়েও এমপিও ভুক্তি হতে না পারা অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ফাহিমা খাতুন বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন করে, সকল নিয়ম মেনে আমরা চারজন এক সাথে নিয়োগ পেয়েছি। অধ্যক্ষ বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ব্যাক ডেটে নিয়োগ দেখিয়ে দুইজনকে এমপিওভুক্ত করেছেন। আর আমাকে এবং দর্শন বিষয়ের আব্বাসের পদ শূন্য দেখিয়ে এনটিআরসিএ‘র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। আমরা এই দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের বিচার চাই এবং আমাদের এমপিও ভুক্ত করার আবেদন জানাই।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মী গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, সাবেক সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহারের ক্ষমতা পুঁজি করে নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ কেলেঙ্কারি, স্বেচ্ছারাতিসহ নানা অনিয়ম করেছেন অধ্যক্ষ। তদন্তপূর্বক এই অধ্যক্ষের বিচার দাবি করছি।

হোস্টেলের বিষয়ে উপাধ্যক্ষ ইজারাদার নাহিদুল ইসলাম বলেন, মোংলা ও ফকিরহাটে দুটি মহিলা কলেজ এব্ং যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল হয়ে যাওয়ায় এখন শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে থাকতে চায় না। তাহলে আপনারা স্ব-পরিবারে হোস্টেলে থাকেন কেন, এমন প্রশ্নে কোন উত্তর দিতে পারেননি এই শিক্ষক।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ শেখ খালিদ আহম্মেদ বলেন, এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। মূলত আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। নতুন ভবনের পূর্বপাশে ও সামনে বালু ভরাট করা হয়েছে। টিউশন ফির টাকা শিক্ষকদের দিতে হবে এমন কোন আইন নেই।

কলেজের নব নিযুক্ত সভাপতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান বলেন, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে অনেক অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কলেজে লাইব্রেরি, ছাত্রীনিবাস ও মিলনায়তন বিষয়ে সমস্যা রয়েছে। বিশাল হোস্টেলে একজন ছাত্রীকেও থাকতে দেওয়া হয় না। কলেজের ২৭ টি দোকানের ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কলেজের গরীব শিক্ষার্থীদের তহবিলের টাকা লোপাট করা হয়েছে। সকল অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে সত্যতা পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com