• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ২০ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:৫৬ সকাল
bd24live style=

বিলুপ্তির পথে কক্সবাজার সৈকতের লাল কাঁকড়া

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বাইল্যাখালী এলাকা। কক্সবাজার শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে দৃষ্টিনন্দন এই বিচ। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি এখানেই লাল কাঁকড়ার নতুন পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠে কয়েক বছর ধরে। এছাড়া সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী (সায়মন বিচ) পয়েন্টসহ সৈকতের নানা স্থানে টকটকে লাল কাঁকড়া দেখা যেতো। 

এক সময় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে এসে সৈকতে নামলেই পর্যটকদের চোখে পড়ত লাখ লাখ লাল কাঁকড়া। মনে হতো কক্সবাজারে বেড়াতে আসা অতিথিদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দিচ্ছে কাঁকড়ার দল।

এখানকার লাল কাঁকড়াগুলো সৈকতে ভাটার পর চিকচিক করা বালিয়াড়িতে নিজের তৈরি করা বাসা থেকে বেরিয়ে ছোটাছুটি এবং পা দিয়ে নানান আকৃতির আলপনা তৈরি করে। যা পর্যটকদের আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছিলো। 

এতে কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের অধিকাংশই লাল কাঁকড়াতে বিমোহিত হন। অনেকেই শুধু এক ঝলক টকটকে লাল এই কাঁকড়া দেখতে ছুটে আসেন সমুদ্রে। এ কারণে ওই এলাকাকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করে কাঁকড়া বিচ নাম দিয়েছে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন।

কিন্তু পর্যটকদের সেই বুকভরা আশা নিমিষেই বুকফাটা কষ্টে পরিণত হয়। কারণ পুরো সৈকত ঘুরে কাঁকড়ার দেখা পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।

সম্প্রতি অর্থলোভী কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও জেলে কারেন্টজাল বসিয়ে ধ্বংস করছে লাল কাঁকড়া। অসাধু জেলে ছাড়াও সম্প্রতি পরিবেশ বিরোধী কিছু ব্যবসায়ী অর্থের বিনিময়ে সৈকতে ঘোড়া ও বিচ বাইকের বেপরোয়া চলাচলে লাল কাঁকড়ার আবাসস্থল বিনষ্ট করছে। এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির অপার সুন্দর টকটকে লাল কাঁকড়া। এতে করে সৈকতের সৌন্দর্যে বিঘ্ন সৃষ্টির পাশাপাশি মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। প্রাকৃতিক এই জীব বিলুপ্ত হওয়ায় বিমুখ হয়ে পড়েছে পরিবেশবাদী পর্যটকদের অনেকেই।

সৈকত তীরের সৌন্দর্য রক্ষার্থে থাকা এসব জীববৈচিত্র বিলুপ্ত হওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পে। ফলে কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দেশবিদেশের অনেক পর্যটক।

সৈকতে বেড়াতে আসা এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিফাত উল্লাহ জানান, কক্সবাজার থেকে খুব হতাশা নিয়ে ফিরছেন তিনি। কারণ তিনি সমুদ্র সৈকতের লাল কাঁকড়া দেখার আশা নিয়ে কক্সবাজারে এসেছেন। কিন্তু কোথাও তেমন একটা লাল কাঁকড়ার দেখা মেলেনি।

তার মতে, সমুদ্র সৈকতের হিমছড়িস্থ সেনা ক্যাম্প, ইনানী ও ডায়াবেটিক পয়েন্টের অদূরে উত্তরের জনশূন্য সমুদ্র তীরে কিছু লাল কাঁকড়ার দেখা মিললেও তা সামান্য। এতে যেমন হতাশ হলেন তিনি, তেমনিভাবে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের বাহারছড়া, জাহাজপুরা, শামলাপুর, ইনানী, হিমছড়ি, সেনা ক্যাম্প, মো. শফিরবিল, মাদারবনিয়া, মনখালী, ডায়াবেটিক পয়েন্ট এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় এখনো পর্যন্ত কিছু লাল কাঁকড়ার বিচরণ রয়েছে। তবে তা সংখ্যায় খুবই কম।

স্থানীয়রা জানায়, সমুদ্র সৈকতে লাল কাঁকড়া রক্ষা করতে যত্রতত্র বিচ বাইক ও ঘোড়াসহ অন্যান্য সব ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ যান চলাচল বন্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণের জন্য চারণভূমি চিহ্নিত করে তাদেরকে চলাচলের সুযোগ দিতে হবে। সেখানে তারা নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরার পাশাপাশি বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পাবে। এ ব্যাপারে দ্রুত সরকার এবং পরিবেশবাদীদের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানান তারা।

সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক শামসুল হক চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে আমার আসা-যাওয়া ২০ বছরেরও বেশি। ছাত্রজীবনে কক্সবাজার খুব বেশি আসতাম। আসার কারণ হলো, সমুদ্রে গোসল করা, মুক্ত হাওয়া উপভোগ ও লাল কাঁকড়া দেখা। তখন সমুদ্রে নামলেই ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার দেখা মিলতো। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হতো, বালুচরজুড়ে যেন রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ছেয়ে গেছে। এখন সেই কাঁকড়া পাওয়া আর দেখা ভাগ্যের ব্যাপার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, সমুদ্রসৈকতে লাল কাঁকড়া রক্ষায় বিচ বাইক ও ঘোড়াসহ ঝুঁকিপূর্ণ সকল যানবাহন চলাচলে আইন চালু করতে হবে। পাশাপাশি এই প্রাণীদের চারণ ভূমি চিহ্নিত করে সেখানে মুক্ত চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে নিষিদ্ধ করতে হবে সাগরে কারেন্টজাল বসানো।

বাপা কক্সবাজার শাখার সভাপতি আরও জানান, সৈকতে চরম অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে লাল কাঁকড়া। কিন্তু সমুদ্র সৈকতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এ প্রাণীগুলো। তাদের রক্ষা ও অতীতের ন্যায় সর্বত্র বিচরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কক্সবাজারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান জানান, সৈকতে লাল কাঁকর বা রাজ কাঁকড়া বিলুপ্ত প্রায়। লাল কাঁকড়া রক্ষায় কারেন্টজাল বসানো থেকে বিরত থাকতে জেলেদের বহুবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা এই নিষেধাজ্ঞা তারা মানে না।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রাণীদের সর্বত্র বিচরণ নিশ্চিত করতে দর্শনার্থীদের সতর্ক করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা জানালেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. তানভীর হোসেন।

তিনি জানান, যে-সব অবৈধ যানবাহন বিচে চলাচল করছে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ইতোমধ্যে অনেককে জরিমানাও করা হয়েছে। তারপরও যারা নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে সৈকতের পরিবেশ নোংরা করছে তাদের প্রতিহত করা হবে। লাল কাঁকড়া রক্ষায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সৈকতের মাটির লবণাক্ততা হ্রাস করাসহ পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে লাল কাঁকড়া। তাই এসব প্রাণীকে বাঁচানোর দাবি সংশ্লিষ্টদের।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com