
নিখোঁজের ২০ ঘণ্টা পর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী সজীব হোসেনকে উদ্ধার করেছে যশোর জেলা পুলিশ। পুলিশ বলছে অপহরণ বা গুম নয়, ব্যক্তিগত কারণে বন্ধু নাজমুল হাসান রকির বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তিনি। তাঁর বন্ধুদের দাবি অপহরণের নাটক সাজিয়ে ভাইরাল হতেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে সজীব।
এঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়, যেখানে তাকে প্রতারক ও ভণ্ড বলে আখ্যায়িত করেছেন নেটিজেনরা।
গত বুধবার রাত ৯টার দিকে যশোর জেলা পুলিশ মিডিয়া সেল থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সজীব হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা শাখার যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি গত নভেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন, এরপর যবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলে যোগ দিয়েছেন এবং বিপ্লব ২৪ নামে একটি সংগঠন গঠন করেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি রাত ৯ টার পর থেকে সজীব হোসেনের নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো: আমজাদ হোসেন যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি(জিডি) করেন।
এদিকে 'সজীবকে যবিপ্রবির ছাত্রদল নেতা' দাবি করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে এখনো পর্যন্ত যবিপ্রবিতে ছাত্রদলের কমিটি গঠন হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের তৎপরতায় ৮ জানুয়ারি রাতে সজীবকে তাঁর বন্ধুর বাসা থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিবারের জিম্মায় দেয় পুলিশ।
এঘটনাকে ভাইরাল হওয়ার নাটক বলে দাবি করে তাঁর বন্ধু ও যবিপ্রবির শিক্ষার্থী হান্নান হোসেন বলেন, সজিব ভাইরাল হওয়ার জন্য আত্মগোপন করেছে। ও যখন আমাকে ম্যাসেজ দেয় 'তুই কই? আমার সাথে একজন খারাপ ব্যবহার করছে, তিন-চার জন ছেলে হাতে ছুরি আছে।' তারপরে ওকে কেউ অ্যাটাক করছিলো এবং দৌড়ানি দিয়েছিল।
পরবর্তীতে এক বন্ধুর কাছে চলে যায়। আমার কথা রাত নয় টার পর থেকে পরের দিন বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত আমাকে জানালো না কেনো যে আমি সেইভ আছি ভালো আছি। ও যেখানে ছিল অবশ্যই ফোন ছিল। ওর জন্য আমি সারারাত-দিন শিক্ষক, ডিএসবি, এন এস আ ই, পুলিশ, বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ করেছি। আমি মনে করি আমাকে ব্যবহার করে নিজেকে ভাইরাল করার জন্য এমন আত্মগোপন করেছে সজীব।
এদিকে এঘটনাকে প্রতারণা বলে দাবি করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলার আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, সজীব যে বিতর্কিত কাজটি করেছে সেটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে পুঁজি করে হাইলাইট হওয়ার জন্য বাজে ভাবে ব্যবহার করেছে। এতে করে ছাত্রসমাজ যেভাবে অপমানিত হয়েছে পাশাপাশি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ক্ষুণ্ন করেছে, যার কোন ক্ষমা হয় না। সজীব যে নাটক মঞ্চস্থ করেছে তার মদদদাতা যারা তাদের খুঁজে নিয়ে আসা হোক।
কেন তারা এমন নাটক মঞ্চস্থ করল? কেন শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে খেলা করা হলো? আমরা মনে করি সজীব যেভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এর জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত। পাশাপাশি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত যাতে, ভবিষ্যতে অন্য কোন ছাত্র নিজস্ব রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে খেলতে না পারে।
ঘটনা জানতে সজীব হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
যশোর জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের বিবৃতিতে বলা হয়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোতয়ালী মডেল থানাধীন চুড়ামনকাটির বাগডাঙ্গা এলাকার একটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ মোঃ সজীব হোসেন কে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ব্যক্তিগত কারণে তার এক বন্ধু চুড়ামনকাঠির জনৈক নাজমুল হাসান রকির বাড়িতে ফোন বন্ধ করে রাত থেকে অবস্থান করছিলেন। তাকে উদ্ধার পূর্বক জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে তার বোন মোছা: লাবনী খাতুন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জিম্মায় বুঝিয়া দেওয়া হয়।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো: আমজাদ হোসেন বলেন, সজীবের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানতে পেরে আমি যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি জিডি করেছিলাম।পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করলে আমরা এসপি অফিসে যায়। পরে আমাদের ও তার আপন বোনের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর