চার বছরেরও বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের নিয়োগ কার্যক্রম। ২০২০ সালে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আওতায় বেশ কয়েকটি পদের নিয়োগ চূড়ান্ত হলেও এখনো ৬১০টি পদের ফলাফল প্রকাশ হয়নি। এ দীর্ঘসূত্রতায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
২০২০ সালের ২২ অক্টোবর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ৪ হাজার ৩২টি পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাউশি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পদের নিয়োগ চূড়ান্ত হলেও দশম গ্রেডের ৪টি পদ—প্রদর্শক (৫১৪), গবেষণা সহকারী (২১), সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার (৬৯) ও ল্যাবরেটরি সহকারী (৬)—এ এখনো চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হয়নি। এ চার পদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭,৯৬৩ প্রার্থীর মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হলেও ফল আটকে রয়েছে।
মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নিয়মিত মহাপরিচালক ও পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) না থাকায় এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি, কিছু পক্ষ নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য টালবাহানা করছে।
দীর্ঘ সময় ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে থাকায় চাকরিপ্রার্থীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। প্রদর্শক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী আতিকুর রহমান বলেন, ‘চার বছরেও নিয়োগ সম্পন্ন করতে না পারা চরম হতাশাজনক। ইতোমধ্যে অনেকের চাকরির বয়সসীমা পার হয়ে গেছে। দ্রুত ফলাফল প্রকাশের দাবি জানাই।’
একই ধরনের মন্তব্য করেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আরেক চাকরিপ্রার্থী আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, ‘এই নিয়োগের জন্য অন্য চাকরির সুযোগ ছেড়ে দিয়েছি। অথচ মাউশি আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।’
মাউশি সূত্র বলছে, ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর নিয়োগে কোটা প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে দেরি শুরু হয়। তবে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক চিঠিতে স্পষ্ট করা হয়েছে, ‘২২ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির শর্তাধীনে অর্থাৎ সবশেষ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে নিয়োগ সম্পন্ন করাই সমীচীন হবে।’
এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মাউশির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাব ও নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পক্ষে থাকা পক্ষগুলোর কারণে এই জট তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘ চার বছরেও নিয়োগ কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় চাকরিপ্রার্থীদের হতাশা এবং ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। কিছুদিন আগে তারা এ বিষয়ে মানববন্ধনও করেছে। প্রদর্শক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আতিকুর রহমান বলেন, ‘চার বছরেও নিয়োগ শেষ করতে পারেনি মাউশি। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? ইতিমধ্যে অনেকের চাকরির বয়সও শেষ হয়ে গেছে। সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে ফল প্রকাশের দাবি জানাই, না হলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’
বিষয়টি দ্রুত সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে প্রার্থীদের অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর