মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে অভিনব কায়দায় কাতার প্রবাসী বাবলার ইয়াবা পাচারের চেষ্টা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এলাকাজুড়ে। বাবলার ইয়াবা পাচারের গল্প যেন হার মানাচ্ছে সিনেমাকেও।
বাবলা উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দঃ সাগরনাল গ্রামের আব্দুল হাসিমের ছেলে। দীর্ঘদিন থেকে কাতারে থাকেন তিনি। তবে তিনি ঘনঘন দেশে আসেন এবং অনেকটা রাজকীয় কায়দায় চলাফেরা করেন।
অনুসন্ধান বলছে বাবলা ইয়াবা ব্যবসায়ের সাথে দীর্ঘদিন থেকে জড়িত। বিভিন্ন উপায়ে বিদেশগামী যাত্রীদের বোকা বানিয়ে কাতারে ইয়াবা নেন। কাতারে বাবলা গড়ে তুলেছেন ইয়াবার রমরমা ব্যবসা। কাতারগামী প্রবাসীদের টার্গেট করে বাবলা সহজ সরল প্রবাসীদের ব্লেইকমেইল করে প্যান্ট বা ট্রাউজারে করে ইয়াবা কাতার নিয়ে থাকেন বলে জানান এলাকাবাসী। প্রতিমাসে বিদেশযাত্রীদের টার্গেট করে বাবলার এমন অপকর্ম এখন মানুষের মুখে মুখে।
জানা যায়, কিছুদিন আগে বাবলা ট্রাভেলস ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান জাহাঙ্গীরের সাথে যোগাযোগ করে অনুরোধ জানান কাতার প্রবাসী যেকোনো যাত্রীর মাধ্যমে একটি প্যান্ট উনার কাছে নিতে চান। জাহাঙ্গীর সরল মনে বাবলার ছোট্ট সেই অনুরোধ রাখেন। তারপর জাহাঙ্গীর উনার আরেক ব্যবসায়িক অংশীদার বদরুল ইসলামকে বাবলার প্যান্ট যেকোনো কাতার প্রবাসী যাত্রীর কাছে দিয়ে দেওয়ার কথা বলেন।
রবিবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে বাবলা শপিং ব্যাগে করে একটি ট্রাউজার পাঠান বদরুলের কাছে। বদরুল সেই ট্রাউজার নিয়ে যান কাতারের যাত্রী ফুলতলা ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের মজর আলীর ছেলে হেলাল মিয়ার কাছে। কৌতূহলী হয়ে কাতার যাত্রী হেলাল ব্যাগটি খুলে ট্রাউজার চেক করেন এবং সেখানে ট্রাউজারের ফিতার জায়গায় ৫০ পিস ইয়াবা দেখতে পান। সেখানে উপস্থিত আরোও ৩/৪ জন ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করেন।
ইয়াবা দেখতে পেয়ে বদরুল স্থানীয় ইউপি সদস্য ইমতিয়াজ গফুর মারুফ ও বাবলার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জুনেদ আহমেদকে খবর দেন। সেখানে জড়ো হোন এলাকার শতাধিক মানুষ। বাবলার বাবা আব্দুল হাসিম ঘটনাস্থলে আসেন। বাবলার বাবা বাবলার সাথে কথা বলে উপস্থিত সকলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বাবলাকে ঘটনা স্বীকার করে দুই ইউপি সদস্যের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। বাবলা শতাধিক মানুষের সামনে হোয়াটসঅ্যাপের অডিও কলে (লাউড স্পিকার) তিনি ইয়াবা পাঠিয়েছেন এমন স্বীকারোক্তি দেন এবং সবার কাছে ক্ষমা চান। পাশাপাশি ইউপি সদস্যদের অনুরোধ করেন বিষয়টি সামাজিকভাবে শেষ করার জন্য।
ইতিমধ্যে খবর পৌঁছে যায় জুড়ী থানায়। এসআই মোস্তফা মিয়ার সঙ্গীয় ফোর্সসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হোন। তারপর ঘটনাস্থলে পৌঁছান জুড়ী থানার ওসি (তদন্ত) জহিরুল হক। সেখান থেকে ইয়াবাগুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে যান। পরে থানার এসআই মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে ইয়াবা বহনের দায়ে মামলা দায়ের করে অভিযান পরিচালনা করে দক্ষিণ সাগরনাল গ্রামের আদম খা'র ছেলে আতাউর মিয়াকে গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য, আতাউর মিয়া বদরুলের কাছে কাতার প্রবাসী বাবলার কথা বলে ট্রাউজারটি নিয়ে গিয়েছিলেন। আর সেই ট্রাউজারেই ইয়াবা গুলো লুকায়িত ছিল।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইনতিয়াজ গফুর মারুফ ও জুনেদ আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাবলা শতাধিক মানুষের সামনে হোয়াটসঅ্যাপের অডিও কলে (লাউড স্পিকার) তিনি ইয়াবা পাঠিয়েছেন এমন স্বীকারোক্তি দেন এবং সবার কাছে ক্ষমা চান। পাশাপাশি তার বাবাও সবার কাছে ক্ষমা চান।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে বাবলার হোয়াটসঅ্যাপে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কবির উদ্দিন জানান, এ মামলায় ইয়াবা বহনের দায়ে আতাউর মিয়াকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর