লালমনিরহাটে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার রেললাইনের পাশে রেলওয়ের ভূমি দখল করে গড়ে তোলা কয়েক কোটি টাকার একাধিক অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল থেকে লালমনিরহাট জেলা শহরের ব্যস্ততম এলাকা বিডিআর রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় এ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা এ অভিযানে অর্ধশতাধিক আধপাকা ও কাচা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
জানা যায়, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামিলীগের একটি চক্র রেলওয়ের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। সেই সময় আওয়ামীলীগ নেতা মৃত জহুরুল হক মামুন নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রেসক্লাব ও ইমারত শ্রমিকের স্থাপনা উচ্ছেদ করে তার দখলে নেন রেলের জায়গাটি। পরে জহুরুল হক মামুন মারা গেলে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মতিয়ার রহমানের ভাতিজা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন রেলের জায়গাটি তার চাচার প্রভাব খাটিয়ে নিজ দখলে নেন এবং মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া দেন।
রেলের জমিতে অবৈধ নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের নিয়মিত অংশ হিসেবে ওই অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ অভিযানে আসে রেল কর্তৃপক্ষ।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে দিনব্যাপী ওই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। একই অভিযানে বিডিআর গেট রেললাইনের পাশে থাকা ফলের দোকানগুলোও উচ্ছেদ করা হয়। এসময় ব্যবসায়ীদের সাথে রেল কর্তৃপক্ষের সামান্য উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরে তা স্বাভাবিক হয। অভিযানে রেলের প্রায় এক একর জায়গায় নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, আওয়ামীলীগের আমলে গায়ের জোরে রেলের জমি দখল করে আওয়ামীলীগের কিছু জ্যৈষ্ঠ নেতা। পরে সেখানে সাবেক ছাত্রলীগ ও আওয়ামিলীগ নেতা জহুরুল হক মামুন ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের ভাতিজা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেনসহ আওয়ামিলীগের কতিপয় নেতা মিলে রেলের সেই জায়গায় আলিশান একটি মার্কেট নির্মান করে। রেল থেকে বার বার নোটিশ এবং মৌখিকভাবে বলার পরেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয় আওয়ামিলীগের নেতৃবৃন্দ।
মার্কেট নির্মাণের কয়েকবছর পর আওয়ামীলীগ নেতা জহুরুল হক মামুন মারা গেলে তার পরিবারের দখলে থাকে মার্কেটটি। পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলে জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ সকল নেতারা পালিয়ে যায়। পরে রেলওয়ে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযানে পরিচালনা শুরু করে।
এদিকে আওয়ামীলীগ নেতাদের দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা রেলের জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত স্থপনা উচ্ছেদ করায় স্বস্তি ফিরে এসেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
এ বিষয়ে রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ সম্পত্তি সহকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, দীর্ঘদিন ধরে একটি মহল রেলের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে ভোগ করে আসছিল। উচ্ছেদের আগে তাদেরকে একাধিকবার নোটিশ এবং মৌখিকভাবে বলার পরেও তারা রেলের জায়গাটির দখল ছাড়েন নাই। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি আবারও তাদেরকে বলা হয় এবং মাইকিং করা হয়। পরে আজ রবিবার সকাল থেকে রেলওয়ে ভূমি দখলমুক্ত করতে এ অভিযান চালানো হয়।
তিনি আরও বলেন, রেলের জমিতে অবৈধ নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের নিয়মিত অংশ হিসেবে এই উচ্ছেদ অভিযান চলছে। রেলের জমিতে যত অবৈধ স্থাপনা আছে, পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
অভিযানের সময় লালমনিরহাট রেলওয়ে থানার এসআই মামুন সহ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও সদর থানার পুলিশের একটি টিম উপস্থিত ছিলেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর