
নারায়ণগঞ্জের টানবাজার। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে এখানকার সুতার গদিতেই শুরু হয়েছিল মো. বাদশা মিয়ার পথচলা। সাধারণ এক এজেন্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করে আজ তিনি দেশের শীর্ষ টেক্সটাইল শিল্পগোষ্ঠী বাদশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার। বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য।
শুরুটা ছিল টানবাজারের সুতার গদিতে। তখন তিনি স্পিনিং মিলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন, বিভিন্ন প্রান্তে সুতা সরবরাহ করতেন। সেখান থেকেই আজ তিনি দেশের সবচেয়ে বড় সুতা উৎপাদনকারী কারখানার মালিক। তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বাদশা টেক্সটাইলস লিমিটেড ২০১৯ এবং ২০২০ সালে দেশের সর্বাধিক সুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের গল্প
মাদারীপুরের শিবচরের পাঁচচর ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া বাদশা মিয়া জীবিকার তাগিদে ১৯৭৬ সালে নারায়ণগঞ্জে আসেন। ১৯৭৭ সালে সুতার পাইকারি ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে ঐতিহ্যবাহী সুতার গদির মালিক হওয়ার পর, তিনি শিল্প স্থাপনের দিকে মনোযোগ দেন। ২০০০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পাইওনিয়ার সোয়েটার লিমিটেড এবং ২০০৪ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রতিষ্ঠা করেন বাদশা টেক্সটাইলস লিমিটেড ও কামাল ইয়ার্ন লিমিটেড।
এই কারখানাগুলোর দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ২৬৫ টন, যা দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বর্তমানে বাদশা গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার ৩০ থেকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার।
কাজের প্রতি নিবেদন
করোনাকালে দেশের অনেক কারখানায় কার্যক্রম স্থবির থাকলেও বাদশা মিয়া থেমে থাকেননি। কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে তিনি নিজে ২০-২২ দিন কারখানায় অবস্থান করেন। তার একাগ্রতা শুধু মহামারির সময়েই নয়; বরং কর্মজীবনের শুরু থেকেই কাজের প্রতি তার এই নিবেদন অব্যাহত রয়েছে।
বাদশা গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বলেন, "বাদশা মিয়ার সততা ও নিষ্ঠাই তাকে দেশের শীর্ষ সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বানিয়েছে। তিনি একজন অকপট ও পরিশ্রমী মানুষ।"
পরিবারের সক্রিয় ভূমিকা
বাদশা মিয়ার চার সন্তানের মধ্যে তার দুই ছেলে—বড় ছেলে কামাল উদ্দিন আহমেদ ও ছোট ছেলে মহিউদ্দিন আহমেদ—ব্যবসায় তার পাশে রয়েছেন। ছোট ছেলে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, "বাবার পরিশ্রম এবং কাজে লেগে থাকার মানসিকতা আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে। তার দেখানো পথেই আমরা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার চেষ্টা করছি।"
টেক্সটাইল খাতে অবদান
দেশের বস্ত্রখাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে বাদশা গ্রুপের ভূমিকা অসামান্য। ১,২৩২টি সুতা ও কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাদশা গ্রুপ রয়েছে শীর্ষে। এই শিল্পে তার প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে।
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
দেশের টেক্সটাইল খাতে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচনে বাদশা মিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তার প্রতিষ্ঠানের সফলতা শুধু তার নিজের নয়, বরং দেশের বস্ত্রশিল্পের অগ্রগতিরই একটি প্রতিচ্ছবি। সততা, অধ্যবসায়, আর একাগ্রতার মিশেলে শূন্য থেকে শীর্ষে পৌঁছানোর এই গল্প আজ হাজারো উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণা।
সর্বশেষ খবর