নাটোরের বাগাতিপাড়ায় সরকারি ভাবে দেয়া জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে, ফলে বিপদে পড়েছেন সরকারিভাবে সুবিধা নেয়া সুবিধাভোগীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুবিধাভোগী এক নারী জানান আমি দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণ সুবিধা গ্রহণ করে আসছি। তবে গত জুলাই মাস থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ নারীর ভাষ্য, তাঁর স্বামী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে উদাসীন। তিনি প্রয়োজনীয় সামগ্রী না কেনায় সরকারি ব্যবস্থায় নির্ভর করতে হয়। তবে সরকারিভাবে এসব সরবরাহ বন্ধ থাকায় তিনি অকাল গর্ভধারণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এখন তিনি কী করবেন বুঝতে পারছেন না। শুধু এ নারী নন, গত প্রায় ছয় মাস যাবৎ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় আরও অনেকের অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের শঙ্কা বেড়েছে।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দম্পতিদের চাহিদা অনুযায়ী ট্যাবলেট, কনডম, ইনজেকশন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। উপজেলায় প্রতি মাসে বই ও কনডমের প্রায় ৩২ হাজার প্রয়োজন থাকলেও গত মাসে ১০ হাজার পাওয়া গেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। উপজেলায় ৩১ হাজার ৮৭৪ জন নারী জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পান। এর মধ্যে সুখী ও আপন (ট্যাবলেট) ৭ হাজার ১৭১ ও কনডম পান ২৪ হাজার ৭০৩ জন।
আরো জানা যায়, এ পদ্ধতি গ্রহণে আগ্রহী নারীদের দুই মাস পরপর বিনামূল্যে এসব সামগ্রী দেওয়া হয়। গ্রামের দরিদ্র নারীরা এর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। তবে এখন চাহিদার এক-চতুর্থাংশ সামগ্রী সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। যা পাঁচ দিনেই শেষ হয়ে যায়। এ জন্য সবাইকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ পদ্ধতি গ্রহণকারী একাধিক নারী জানান, গ্রামের অনেক দম্পতি বাজার থেকে এসব উপকরণ কিনতে পারেন না। স্বামীও এসব পদ্ধতি গ্রহণের ব্যাপারে উদাসীন বা কিনতে আগ্রহী নন। তাই তারা পুরোপুরি সরকারের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রায় ছয় মাস ধরে পরিবারকল্যাণ সহকারীরা বাড়িতে এলেও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ট্যাবলেট ও কনডম দিচ্ছেন না। ফলে তারা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিবারকল্যাণ সহকারী জানান, নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুই মাস পরপর বাড়ি ভিজিট করা হয় এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ করা হয় তবে কয়েক মাস ধরে ওই সকল সামগ্রী সরবরাহ কম থাকায় আংশিক সেবা দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাম পর্যায়ে দম্পতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ না করলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বেড়ে যায়। এতে জনসংখ্যা বেড়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শরীফ মোঃ জামিউর রহমান বলেন, প্রায় ছয় মাস হচ্ছে চাহিদার তুলনায় এসব সামগ্রী কম আসতেছে। ফলে সব দম্পতিকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তবে এটি শুধু বাগাতি পাড়াতেই নয়, সারাদেশেই সংকট রয়েছে। আশা করছি স্বল্প সময়ে সংকট কেটে যাবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর