সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে বন্ধ হওয়া বেক্সিমকো গ্রুপের ১৬ টি বন্ধ কারখানা এলসি চালু ও কারখানা খুলে দেয়াড় দাবিতে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১০ টা থেকে মহাসড়কটির ঢাকা-মুখী লেনে মাথায় ব্যানার বেঁধে অবস্থান নেন তারা। ২ঘন্টা মহাসড়কের পাশে অবস্থান শেষে দুপুর ১ টায় শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যাবে বলে জানান।
এসময় মহাসড়ক জুড়ে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এর আগে গাজীপুরের চক্রবর্তী এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সামনে সকাল ৮ টা থেকে জড়ো হতে থাকেন শ্রমিকরা। পরে মহাসড়কের যানজট প্রবণ এলাকা গুলো বাদ দিয়ে পুরো মহাসড়কে সারিবদ্ধ হয়ে অবস্থান নেন শ্রমিকরা।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধার শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান ফজলুল রহমান। বন্ধের কারণ হিসেবে সরকার জানায়, কারখানাগুলোতে অর্ডার না থাকা ও ব্যাংকে ঋণখেলাপি থাকায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, এর আগেও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে কয়েক দফায় চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর বিক্ষোভে শ্রমিকদের কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর তারা আর কোনো বিক্ষোভ না করে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার কয়েক হাজার শ্রমিক গাজীপুর মহানগরীর চক্রবর্তী এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। পরে পুরো নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেন তারা।
বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিক জামিলা বলেন, কোন জায়াগায় গিলি আমাগের চাকরিই হয় না, আমরা রুম ভাড়া দিতি পারিনা। আমাগের ফিরাই দেয়, বলে বেক্সিমকোর শ্রমিকের কোন চাকরি হবেনা। তালি কি কইরে খাব আমরা, কোথায় যাব আমরা? কোন জায়গায় চাকরি নিতি গেলি আমাগের নেয়ই না, আমাগের চাকরি দেইইনা। বাড়িওয়ালারা বলে বাড়ি থেকে টাকা এনে দিয়ে যাও। আমরা বাড়ি থেকে কোথা থেকে টাকা এইনে দিব! আমাগের বাড়িতে জমি-জাতি আছে নাকি? আমরা গেরস্ত নাকি? দোকান বাকিও দিতে পারতেছিনা, দোকানদারও শোনেনা। বলে আর কত দিন বাকি দেব?
বেক্সিমকোর কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর মো. জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের আজকের কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হল আমাদের কোম্পানির এলসি খুলে দেয়া ও বেতন ভাতা পরিশোধ করা। এবং কোম্পানিটা খুলে দেওয়া। এই কোম্পানির সাথে হাজার হাজার শ্রমিক জড়িত। এই কোম্পানি খুলে দিলে আমরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারব। আমরা চাই বেতন ভাতা পরিশোধ করা হোক, এতে আমাদের ফ্যামিলিগুলো সুন্দরভাবে চলতে পারবে। আমরা উচ্ছৃঙ্খল কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইনা, আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছি। এই কোম্পানি বাঁচলে আমাদের পরিবার বাঁচবে। চন্দ্রা থেকে নবীনগর পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক আমরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে আছি।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের (বিজিডি) এর সহকারী ব্যবস্থাপক আলিম উদ্দিন জানান, বেক্সিমকোর সকল কারখানা খুলে দেয়াড় জন্যই আজকের এই মানববন্ধন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সকল কারখানা খুলে দেয়া এবং সকল এলসির ব্যবস্থা করা এবং ক্রয়াদেশ পেতে যা যা করা দরকার তার দাবি জানানো। এসকল দাবি না মানা হলে আমরা আবার আগামী শনিবার কর্মসূচিতে যাবো বলেও জানান তিনি।
বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অরবিন্দু ব্যাপারী বিন্দু বলেন, সরকারের উচিত হবে শ্রমিকদের সাথে আলাপ আলোচনা করে শ্রমিকদের স্বার্থে একটা সুষ্ঠু সমাধান বের করা। যাতে করে এই শ্রমিকদের সড়কে নামতে না হয় এবং এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কোন তৃতীয় পক্ষ যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সে দিকে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রাখার আহ্বান জানান তিনি।
এবিষয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গাজীপুর অঞ্চল) আবু হাসান মিয়া বলেন, বেক্সিমকোর শ্রমিকরা তাদের দাবি নিয়ে মহাসড়কের পাশে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করছে। রাস্তাঘাটের যানবাহন চলাচল যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য রাস্তায় মোতায়েন রয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর