
জয়পুরহাট জেলা উত্তর জনপদের মধ্যে শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের কৃষকদের জীবন-জীবিকা মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে আলু চাষে কৃষকেরা গত কয়েক বছর ধরে ভাল লাভের মুখ দেখলেও এ বছরের পরিস্থিতি ভিন্ন। আগাম আলুতে বাজার সয়লাব হওয়ায় ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা।
আলুর ভরা মৌসুম শুরু হওয়ার অন্তত দেড় মাস আগেই কৃষকেরা মাঠ থেকে আগাম আলু তুলছেন। ফলন ভালো হলেও বাজারে আলুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চাষিদের মাঝে নেমে এসেছে হতাশা। ঋণের দায়ে জর্জরিত অনেক চাষিরা তাদের পাওনাদারদের চাপ থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ আলু তোলা বন্ধ রেখেছেন লোকসানের ভয়ে।
কৃষকেরা সরকারের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার দাবি জানিয়েছেন।
কৃষকেরা জানান, গত বছরের আগাম আলুর বাজার ভালো থাকায় এবার দ্বিগুণ জমিতে আলু চাষ করেছেন অধিক লাভের আশায় । তবে এবারের বাজারে চরম ধস নেমেছে।
ঋণ নিয়ে অধিক জমিতে আলু চাষ করলেও বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সেই ঋণ শোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাষাবাদ, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ আর শ্রমসহ সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও উঠছে না বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।
বামন গ্রামের কৃষক সিরাজুল ও গাফফার হোসেন বলেন, ‘ঋণ করে আলু চাষ করেছি। কিন্তু আলুর দাম এমন কম যে, পাওনাদারদের টাকা দিতে পারছি না। অনেক কৃষক ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’
আরেক কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে কেজিপ্রতি আলু ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার তা ১৮-২০ টাকায় নেমে এসেছে। উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।’
ইমামপুর গ্রামের কৃষক আশরাফ সরকার ৬২ শতক জমিতে আগাম জাতের ক্যারেজ ও গ্যানোলা জাতের আলু চাষ করেছেন। তিনি জানান, রোপণের ৬৫ দিনে ১৫০ মণ আলু পেয়েছি। খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। বিক্রি করতে পেরেছি মাত্র ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা। লোকসান হয়েছে ২২ হাজার ২০০ টাকা। মাঠে আরো আলু আছে, লোকসানের কারণে তুলতে ভয় পাচ্ছি।
কালাই উপজেলা সদরের কৃষক দুলাল মিয়া জানান, আমার ১৮ বিঘা জমিতে এবার কার্ডিনাল আলু হয়েছে। ১২০ টাকা কেজি দরে বীজ আলু কিনেছি। সারসহ অন্যান্য খরচও বেশি। এখন আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ২০ টাকায়, অথচ খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি ২২ টাকা। তাই লোকসানের ভয়ে আলু তুলতে পারছিনা ।
পুনট বাজারের আলুর পাইকারি ব্যবসায়ী মাহফুজার রহমান জানান, আমরা ১৮-২০ টাকা কেজি দরে আলু কিনে মাত্র ১ টাকা লাভে বিক্রি করছি। আগাম জাতের আলুর সরবরাহ বেশি, তাই দাম পড়ে গেছে।
আবু বক্কর নামে এক ক্রেতা জানান, এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকায় যে আলু কিনেছি, এখন বাজারে সেই আলু ২২ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, ‘চাষিদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সময়ের ব্যবধানে আলুর দাম বাড়বে। বিদেশিরা বাংলাদেশ থেকে আলু নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন। তবে কৃষকেরা এই আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না। তাদের মতে, মাঠের আলু তোলার খরচও উঠছে না।’
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জয়পুরহাট জেলায় এবার ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এর মধ্যে ৯ হাজার হেক্টরে আগাম জাতের আলুর চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন। উৎপাদন বেশি হলেও বাজারমূল্যের অভাবে কৃষকেরা লাভের মুখ দেখতে পারছেন না। তাই লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে সরকারের দ্রুত সহায়তা চেয়েছেন আলু চাষীরা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর