
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স (ফিমস) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নাহিদ সুলতানার বিরুদ্ধে পর্দা নিয়ে হেনস্তা, মার্ক টেম্পারিং, শিক্ষার্থীদের ফোন করে হুমকি দেওয়াসহ শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আক্রমণের অভিযোগ এনে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ফিমস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ৩৮ জন শিক্ষার্থী সাক্ষরসহ বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগপত্র জমা দেয়। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ফিমস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেহেদী মাহমুদুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গত রবিবার শিক্ষার্থীরা বিভাগের একজন শিক্ষকের ক্লাস বর্জন নিয়ে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। আমরা অ্যাকাডেমিক ভাবে বিষয়টির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবো।
অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, আমাদের বিভাগের একজন শিক্ষিকা (ড. নাহিদ সুলতানা) এর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু অভিযোগ হচ্ছে মার্ক টেম্পারিং, পর্দা নিয়ে হেনস্তা করা, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা, ক্লাসরুমে এসে হুমকি-ধামকি দেওয়া এবং জনৈক শিক্ষার্থীকে ফোন কলে হুমকি দেওয়া। এমতাবস্থায় আমরা ওনার ক্লাস করতে ইচ্ছুক নই এবং ভবিষ্যতে ওনাকে কেউ আমাদের সুপার ভাইজার হিসেবে চাই না ।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শুধু মার্ক বৈষম্য নয়, ওই শিক্ষিকা পাঠদানের সময়েও অবজ্ঞাসূচক ও অবমাননাকর মন্তব্য করেন যা শিক্ষার্থীদের মনোবলে প্রভাব ফেলে।
পর্দা করায় হেনস্তার শিকার হওয়া তাবাসসুম জাহান সানজি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্লাস টেস্ট চলাকালীন সময়ে আমাকে বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করে আমার সহপাঠীদের সামনে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। যেমন আমি পর্দা কখন থেকে শুরু করলাম কে আমাকে পর্দা করতে বলে। পর্দা করে দাদির মতো হয়ে থাকলে হবে নাকি?
এমনকি আমার স্বামীর ব্যাপারেও নানা নেতিবাচক কথা বলে আমাকে সবার সামনে অপমান করে। এছাড়াও আমাকে পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্লাস ইশারা ইঙ্গিতে নানা ভাবে সবার সামনে অপমান করতো।’
এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘পর্দার পাশাপাশি আমার পারিবারিক জীবন নিয়েও তিনি নানাভাবে আমাকে হেনস্তা করতেন। তখন আমার নতুন বিয়ে হয়েছিল এবং আমি পুরোপুরি পর্দা করা শুরু করি। ম্যাম সবার সামনে আমাকে দাড় করিয়ে আমার স্বামীকে নিয়ে অনেক আজেবাজে কথা বলতো। তিনি বলতো তোমার স্বামী তোমাকে বোরকা পরিয়ে দাদি বানিয়ে দেশে-বিদেশে হাফপ্যান্ট পরে ঘুরবে। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ তিনি এভাবে ক্লাসে আমাকে লাঞ্ছিত করতেন।
তিনি জিজ্ঞেস করেন আমার স্বামী কি দেশের বাহিরে চলে গেছে? আমি বলেছি জ্বি চলে গেছে। তখন তিনি আমাকে বারবার ইনফ্লুয়েন্স করছিল বেপর্দা হওয়ার জন্য। তিনি বলেন হাজবেন্ড চলে গেছে ভালো হইছে, এখন খিমার টান দিয়ে দেখিয়ে বললো এভাবে খুলে ফেলো।’
পর্দা নিয়ে হেনস্তার পাশাপাশি দাড়ি রাখা নিয়ে লাঞ্ছিত হওয়া এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, দাড়ি রাখায় নাহিদ ম্যাম আমাকে প্রায় সময় হেনস্তা করতেন। তিনি দাড়ি দেখে বলতেন তোমাকে জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতার মত লাগতেছে। ক্লাসে সবার সামনে এভাবে দাড়ি নিয়ে আমাকে প্রায় হেনস্তা করতো। আমাদের ব্যাচের সব শিক্ষার্থী এসব ঘটনার সাক্ষী। তিনি সবার সামনেই এভাবে আমাদের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লাঞ্ছিত করতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিমস বিভাগের ১৬নতম ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেন। তারা বলেন, পর্দা করা নিয়ে আমাদের ব্যাচের একটি মেয়েকে প্রায় হেনস্তা করতেন নাহিদ সুলতানা ম্যাম। ক্লাসের মধ্যেই ক্লাসের সবার সামনে তিনি এসব বিষয়ে কথা বলতেন। মনে হচ্ছিলো পর্দা করা এবং দাড়ি রাখা বড় কোনো অপরাধ।
অভিযুক্ত শিক্ষক ফিমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। চেয়ারম্যান স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছে চেয়ারম্যান স্যার খতিয়ে দেখুক। আমি তো বর্তমানে ওই ব্যাচের (১৬ তম ব্যাচ) ক্লাসই পাই না। তাহলে ওরা আমাকে বয়কট করে কীভাবে?আমি এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, আমার কাছে এখনো লিখিত অভিযোগ আসে নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর