
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে অঞ্চলভিত্তিক ওয়্যারহাউজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
চট্টগ্রামেও এ ধরনের ওয়্যারহাউজ নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ওয়্যারহাউজ করতে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে পশ্চিম ইছাখালী এলাকায় স্থিত এক দশমিক ৫৪ একর খাস জমি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে সচল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলো সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ নির্মাণ করা না গেলে সচল মেশিনগুলোও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের ১০ অঞ্চলে ইভিএমগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিতে ওয়্যারহাউজ তৈরির পরিকল্পনা করেছে কমিশন।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরে কোনো ইভিএম নেই। উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচনে ব্যবহৃত ৭টি উপজেলায় ৫২০ সেট ইভিএম রয়েছে। ইভিএমগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্কুল–কলেজগুলোতে পড়ে আছে।
ওয়্যারহাউজ না থাকায় ইভিএমগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে মীরসরাই উপজেলায় রয়েছে ১৭০ সেট, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১৩০ সেট, ফটিকছড়ি উপজেলায় ৩০ সেট, চন্দনাইশে ২০ সেট, পটিয়া উপজেলায় ২০ সেট, লোহাগাড়া উপজেলায় ১০ সেট এবং আনোয়ারা উপজেলায় রয়েছে ১৪০ সেট।
ইসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ইভিএমের ক্রয় মূল্য আড়াই লক্ষ টাকা। সেই হিসাবে ৫২০টি মেশিনের মূল্য দাঁড়ায় ১৩ কোটি টাকা।
নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে পুরুষ ৬০ হাজার ৫৩, নারী ২৭ হাজার ৩০৮ এবং ২ জন হিজড়া নতুন করে ভোটার হয়েছেন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ লাখ ৫৭ হাজার ২২৫ জন। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৭জন।
জেলার ১৫ উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯৬ জন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ৩১ লাখ ৪ হাজার ৬৯ জন নারী। চট্টগ্রামে এবার নতুন দুইজন মিলে হিজড়া ভোটার ৬০ জনে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কাছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জন্য খাস জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (সাধারণ সেবা) রাশেদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার পশ্চিম ইছাখালী মৌজার ১৩৯০৬ নম্বর দাগের ১ দশমিক ৫৪ একর খাস জমি রয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানতে পেরেছি মর্মে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে জানিয়েছেন।
উল্লিখিত জমি ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস চট্টগ্রামের অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ জানানো হলো।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের ১০ অঞ্চলে ইভিএমগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিতে ওয়্যারহাউজ তৈরির পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক ১০টি অঞ্চল তথা ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহীর মধ্যে সম্প্রতি ঢাকায় একটি ওয়্যার হাউজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ অপর ৯টি অঞ্চলেও উন্নতমানের এই ভোট যন্ত্রগুলোর সুরক্ষায় ইসি উদ্যোগ নিয়েছে।
চট্টগ্রামে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলো সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা গোলাম হোসেন বলেন, ইভিএম সংরক্ষণে ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জন্য জায়গা খোঁজা হয়েছে। মীরসরাইয়ে পশ্চিম ইছাখালী এলাকায় খাস জমি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গোলাম হোসেন বলেন, আমাদের জেলা অফিসে ইভিএম নেই, উপজেলায় রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও আমাদের অফিসে রাখা হয়েছে। এগুলো আমরা যত্ন করে রেখেছি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর