
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রেজাউল করিম শফিক নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও একটি মোটরসাইকেল মুক্তিপন নেয়ার পরও হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার পাশাপাশি কিডনী ড্যামেজ করে দিয়েছে অপহরণকারীরা। ব্যবসায়ী শফিক বর্তমানে বাড়িতে বিছানায় যন্ত্রণায় ভুগছেন।
এ ঘটনায় ৪ জনের নাম উল্লেখসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিলেও মামলাটি রেকর্ড করা হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। মামলায় অভিযুক্তরা হলো-শাহজাদপুর উপজেলার ছোট বিন্যাদাইর গ্রামের মাহফুজুর রহমান রঞ্জুর স্ত্রী রুপা খাতুন, পাবনার সাথিয়া থানার আফতাবনগর এলাকার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে রতন, রনি ও রেজা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, অপহরনকারীর মূলহোতা রুপা খাতুনের সাথে শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউপির মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম শফিকের পার্টনাশীপে ব্যবসা ছিল। ব্যবসা চলাকালীন রুপা খাতুন রেজাউল করিম শফিকের কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা ধার নেন। পাওনা টাকা পরিশোধ না করে রুপা খাতুন হঠাৎ করে ব্যবসা বন্ধ করে দেন।
পরবর্তীতে পাওনা টাকা না দেয়ায় রুপার বিরুদ্ধে আদালতে ব্যবসায়ী রেজাউল করিম শফিক দুইটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দুটি বিচারাধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকেই রুপা খাতুন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করতে থাকে।
এ অবস্থায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বিকালে শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী বাজার থেকে কাজের জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে পাবনা যাওয়ার পথে শাহজাদপুরের বিন্যাদাইর এলাকায় পৌঁছলে রুপা খাতুনসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী রেজাউল করিমকে জোরপূর্বক মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে চোখ বেঁধে একটি হাইস মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
এরপর অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে একটি নৌকায় তুলে নদীর মাঝ বরাবর নিয়ে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে হাত ও পা ভেঙ্গে দেয় এবং পঞ্চাশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
এক পর্যায়ের সন্ত্রাসীরা মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে জোরপূর্বক ৯/১০ টি ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় এবং ডাচ বাংলা ব্যাংকের কয়েকটি ডেবিট কার্ড ছিনিয়ে নেয়। পরদিন ওই কার্ড দিয়ে ব্যাংক থেকে এক লাখ পঁচাশি হাজার টাকা উত্তোলন করে নেয়।
এরপর আবারোর চোখ বেধে নদীর মধ্যে নিয়ে যায় এবং ২০ লাখ দাবি করে নইলে নদীতে হাত-পা বেধে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়। ভয়ে পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করলে পরিবারের লোকজন বিকাশের মাধ্যমে ৮০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
এরপরও অপহরনকারীরা আরো টাকা মুক্তিপন দাবী করে নচেত মেরে ফেলবে হুমকি দিলে আমার পরিবার আরো আট লাখ টাকা নিয়ে আসে এবং পাবনার আমিনপুর এলাকার একটি চর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বাড়িতে চিকিৎসাধীন বিছানায় কাতরাতে কাতরাতে ব্যবসায়ী রেজাউল করিম শফিক বলেন, অপহরনারীরা আমার একটি হাত ও দুই পায়ের হাটুর গিরাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়েছে। হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে। আমাকে দুই কিলোমিটার টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ায় কিডনিতে আঘাত লাগায় কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে। বর্তমানে কিডনি সমস্যা ও হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া চলাচল করতে পারছি না। তিনি আরো জানান, ঘটনার থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও ২০দিন পার হলেও এখনো মামলা রেকর্ড করা হয়নি।
মুক্তিপনের টাকা বহনকারী সিএনজি চালক শফিকের স্বজন আব্দুল হাদি বলেন, মুক্তিপনের ৮ লাখ টাকা পাবনা জেলার আমিনপুর থানার ঢালার চর এলাকায় নিয়ে যাবার পর অপহরকারীরা আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সেখান থেকে একটি নালা পার করে অজ্ঞাত একটি বালু চরের মধ্যে নিয়ে যায়।
দুই কিলোমিটার হাঁটার পর চরের মধ্যে রেজাউল করিম শফিককে হাত-পা বাধা অবস্থায় দেখতে পাই। এরপর অপহরনকারীরা আমার কাছ থেকে আট লাখ টাকা নিয়ে সটকে পড়ে। পরে আমি রেজাউল করিম শফিকে উদ্ধার করে নিয়ে পাবনার একটি হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়া হয়।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম আলী জানান, অপহরন সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর