পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর খালগুলোকে তার স্বাভাবিক গতিপথে রাখতে হবে।
খাল দখলকারীদের আইনের আওতায় এনে এদের কঠিন জবাবদিহির মুখোমুখি করতে হবে। তিনি বলেন, গতকাল আমরা একটা সীমানা দেখতে গিয়েছিলাম। খালে আমরা দেখতে দেখলাম কি, খালের বেজটা কমপ্লিট করে দিচ্ছেন আপনারা। আপনারা এটা করতে পারেন না।
আজ (রবিবার) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, চট্টগ্রাম আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
আইনি বাধার কথা উল্লেখ করে পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন খাল তো আসলে ব্যক্তির নামে রেকর্ড করার কথা না। খাল ব্যক্তির নামে রেকর্ড করেছে, ব্যক্তি বাড়ি বানিয়েছে। এখন এই বাড়ি উচ্ছেদের জন্য সরকার টাকা দেবে। আবার ওই লোককে ক্ষতিপূরণ দেবে। সবটাই জনগণের টাকা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, খালগুলোর এবার সীমানা চিহ্নিত করে ফেলেন। বাংলাদেশে খালের সীমানা চিহ্নিতকরণ একটা খুবই ব্যয়বহুল বিষয়। যখন আমরা নদীর সীমানা চিহ্নিত করতে বললাম। সিমেন্টের ব্লক দিয়ে দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করবে, এইটা আবার দলীয় কন্ট্রাকটাররা পাবে। দলীয় কন্ট্রাকটাররা যখন ভুল সীমানা দিল আমরা পরিবেশবাদীরা বাধা দিলাম। আর তখন আমাদেরকে দোষারোপ করা হলো। আবার ভুল সীমানা যারা নির্ধারণ করেছে তাদেরকেও টাকা দিল সংশ্লিষ্ট সংস্থা । পরবর্তীতে যারা সীমানা করেছে তাদেরকেও টাকা দিয়েছে।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, আপনারা এখান থেকে অল্প একটু দূরে এই চট্টগ্রাম নগরীর পাশেই পটিয়াতে যাবেন দেখবেন যে সেখানে ৫ গ্রামে পানিই নাই। এই খালগুলো আপনারা ব্যক্তি নামে দিয়ে দিচ্ছেন আবার আমরা উচ্ছেদ করে দিচ্ছি, আবার ওদেরকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি। এ সকল ক্ষেত্রে কিন্তু ভূমি প্রশাসনকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা উচিত। আবার সরকারি জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে সেখানে আবার আপনার দেয়া রেকর্ড বলে ব্যক্তি দখল করে নিয়েছে সেই জমি আবার তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকারকে অধিগ্রহণ করে নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, খালের প্রশস্ততা থেকে রেগুলেটর যেন কোনোভাবেই সরু না হয় এ বিষয়ে অনুশাসন জারির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন পানি সম্পদ উপদেষ্টা।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি, রেলপথ ও সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। মতবিনিময় সভায় আগামী চার মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্ম প্রক্রিয়া উপস্থাপন করেন নদী বিশেষজ্ঞ ফাইয়েজ আহমেদ তাইয়েব। সভায় বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামস এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। সভায় চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক সিকান্দার খান, চট্টগ্রাম ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম,আমার দেশ পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুর প্রধান জাহিদুল করিম কচি, স্থপতি জেরিন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি এসএম নুরুল হক, রাজনীতিবিদ এস এম ফজলুল হক প্রমুখ।
উল্লেখ্য, মতবিনিময় সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এ, কে, এম, তাহমিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রশাসক ও যুগ্মসচিব আনোয়ার পাশা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর