কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে টানা দু-দিন যাবৎ পানি না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগী ও তাদের স্বজনরা।
পানি না থাকার নিউজটি বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর টনক নড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। রবিবার রাতে রোগী ও তাদের স্বজনদের কথা চিন্তা করে কোনো উপায় না পেয়ে সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহায়তা নেন। পরে কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৮ হাজার ৬০০ লিটার পানি হাসপাতালের পানির ট্যাংকিতে সরবরাহ করে। এতে এই হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ও তাদের সাথে আসা স্বজনদের কিছুটা হলেও এই চরম দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে। এই উপকার করায় কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগী এবং তাদের স্বজনরা। সোশাল মিডিয়াতেও প্রশংসায় ভাসছেন কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা: নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আমাদের হাসপাতালের ছয়তলায় ১০ ঘোড়ার একটি বড় মটর রয়েছে। ২০২০ সালে লাগানো এই মটরটি প্রায়ই সমস্যা করে। কিন্তু এবার একেবারে বিকল হয়ে যাওয়ায় পানির সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আজ দুইদিন যাবত হাসপাতালে পানি নেই। এতে রোগী ও তাদের স্বজনদের এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের ওয়াশরুম ব্যবহার করতে সমস্যা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এই কথা চিন্তা করে সিভিল সার্জনের সহায়তায় কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে অনুরোধ করলে তারা ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে আমাদেরকে পানি সরবরাহ করেছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আপাতত আমরা দুই গাড়ি পানি এনে হাসপাতালের পানির ট্যাংকিতে সরবরাহ করলাম। তারা আগামীকালকেও পানি দিবে। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কেও বলা হয়েছে তারা সকালে খাবারের পানি সরবরাহ করবে এবং পৌরসভাকেও পানি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা মটরটি খুলে ঢাকা পাঠিয়েছি। ঢাকা থেকে নতুন একটা মটর পাঠাবে। আশা করছি আজ সোমবারের মধ্যে এই পানির সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর (ভারপ্রাপ্ত) সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবুজর গিফারী বলেন, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম আমাকে ফোন করে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের মটর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পানি না থাকার কথা বলেন। এতে এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের সাথে আসা স্বজনদের পানির জন্য বিরাট সমস্যা হচ্ছে বলে তারা আমাকে জানান। পরে আমি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করলে আমাকে হাসপাতালে পানি দিতে অনুমতি দেয়। পরে আমরা আমাদের ৪৩০০ লিটার পানি বাহিত বড় গাড়ি দিয়ে দুই গাড়ি পানি সরবরাহ করি। এতে আশা করছি রোগী ও তাদের সাথে আসা স্বজনদের কিছুটা হলেও এই চরম দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে।
তিনি আরো বলেন, মানুষের সকল কাজেই পানি দরকার। যেমন বিশেষ করে ওয়াশরুম ব্যবহার করলে অবশ্যই পানি জরুরি প্রয়োজন। আর এটা হলো হাসপাতাল। এখানে আরো বেশি পানি খরচ হয়। আশা করছি এই পানির সমস্যা অতিদ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। যদি আজ সোমবারের মধ্যে এই হাসপাতালের পানির সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে হয়ত আজকেও আমাদের পক্ষ থেকে পানি সরবরাহ করবো।
রাতে পানি পেয়ে রোগীর সাথে আসা রাকিব বলেন, আমরা দুইদিন যাবত পানির জন্য যে কষ্ট করতেছি তা বলার বাহিরে। আজকে রাতে ফায়ার সার্ভিসের অফিস থেকে হাসপাতালে পানি দিয়েছে। এখন আমাদের কষ্টটা কিছুটা কমবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা তো সুস্থ আছি। আমরা বাহিরে কোথাও গিয়ে পানি ব্যবহার করতে পারবো। কিন্তু আমাদের যে রোগীরা আছে তারা তো অসুস্থ শরীর নিয়ে বাহিরে যেতে পারবে না। তাদের চিন্তাটা নিয়ে গত দুইদিন খুব কষ্ট করেছি। যাই হোক আজকে ফায়ার সার্ভিস পানি দিয়েছে। এতে আমরা অনেক খুশি। ফায়ার সার্ভিসকে ধন্যবাদ জানাই আমাদেরকে এই উপকারটা করার জন্য। শুধু রাকিব নয় রাকিবের মত আরো অনেক স্বজনরাই আছে যারা রোগী নিয়ে তারাও এই দুইদিন খুব কষ্ট করছে।
পানি সরবরাহ করার সময় ফায়ার ফায়টারদের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত মোঃ সাখাওয়াত হোসেন আকাশ, হাসানাল মামুন নিলয় অপু ও অলিউল্লাহ রাব্বানী উপস্থিত থেকে ফায়ার সার্ভিসকে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর