পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকি না থাকায় বালু খেকোদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। অন্তত ২০ টি পয়েন্ট হতে বালু লুটের উৎসবে মেতেছে বালু খেকোরা। এছাড়া নদীতে পলি পড়ে বালুর চড় হওয়া স্থান থেকেও অবৈধভাবে বালু বেচাকেনার ধুম পড়েছে। বালু খেকোরা এভাবে বালু লুটের কারণে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে বন্যার সময় নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বালু খেকোদের দৌরাত্ম্যের চিত্রটি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁড়ালকাঁটা নদীর বাহাগিলি, চাঁদখানা, পুটিমারী ও নিতাই ইউনিয়নের অন্তত ২০ টি পয়েন্ট থেকে দিন রাত বালু লুট করছে বালু খেকো সিন্ডিকেটটি। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
জানা গেছে- গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে সারা দেশের নদী-নালা,খাল-বিল খনন করা হয়। খননকৃত নদীর বালু নদীর দুই তীরে স্তূপ করে রেখে এসব বালু নিলামে বিক্রির জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তৎকালীন আওয়ামী সরকারের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা লোক দেখানো টেন্ডারের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীকে ম্যানেজ করে বালু খেকো সিন্ডিকেটটি পানির দরে এসব বালুর লট নেয়। এসব বালু নিয়মনীতি না মেনে উত্তোলন ও পরিবহণ করে তারা। পানির দরে নিলাম নিয়ে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করে রাতারাতি অর্থবান হচ্ছেন বালু খেকোরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের ম্যানেজ করে বালু খেকোরা সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে তা তারা নিজেদের পকেটস্থ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত সোম ও মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের চাঁদখানা সারোভাষা ব্রিজের নিচ থেকে, বাহাগিলি ইউনিয়নের স্টিল ব্রিজের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে, বাহাগিলি ডাংগাপাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা আতাউর রহমান আতার বাড়ির পূর্বদিক , বাহাগিলি ময়নাকুড়ি সিনহা কোম্পানির সামনে, বাহাগিলি ঘোপাপাড়া , কালুরঘাট ব্রিজের পূর্ব দিক, পাগলাটারী, নিতাই ইউনিয়নের মৌলভীর হাট, মুশরুত পানিয়াল পুকুর, নিতাই মুশরুত বেলতলি, পুটিমারী ইউনিয়নের চৌধুরীর বাজার, কালিকাপুর ময়দানপাড়া, শালটিবাড়ি, খোকারবাজারসহ প্রায় ২০ টি পয়েন্টে নদী খননের রক্ষিত বালু দিনরাত বালুখেকো সিন্ডিকেট শ' শ' মাহিন্দ্র ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাকে করে বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে চাঁদখানা সাড়োভাষা ব্রীজ সংলগ্ন বালু জমে চড়ে পরিণত হওয়া স্থান থেকে দিন রাত বালু লুট হচ্ছে। বালু খেকোদের দৌরাত্ম্যে ব্রীজটি ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও নদীর বিভিন্ন স্থানে পলি জমে বালুর চড় হওয়া স্থান থেকে বালু লুটের উৎসবেও মেতেছে বালু খেকোরা। ফলে বন্যার সময় ওই স্থানগুলোতে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী জানান, গত বছর আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নামমাত্র মূল্যে নীলফামারী সদরের রোকনুজ্জামান নামে একজন ৮ নম্বর লটটি নিলামে নেয়। ছোট ছোট গাড়ী করে বালু উত্তোলনের নিয়ম থাকলে ড্রাম ট্রাকে করে বালু উত্তোলন করায় কৃষি জমি ও গ্রামীণ রাস্তা ভেঙ্গে নষ্ট করেছে। তাঁর বালু পরিবহনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গ্রামবাসী ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। বর্তমানে আর একটি সিন্ডিকেট ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ওই বালুগুলো পরিবহণ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক কৃষক জানান, বাহাগিলি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ নেতা জুগল চন্দ্র গোপনে নদীর চরসহ ওই স্তুুপকৃত বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দফায় দফায় জানালেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈয়দপুর পাউবোর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন- বর্তমানে তিনটি লটের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। অবশিষ্ট লটের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বালু লুট হলে আমাদের কোনো করার নেই। বালু লুটের বিষয়ে যা করার তা উপজেলা প্রশাসন করবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন- নিলামকৃত তিনটি বালুর লটের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাকি লটগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। বালু চুরি রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর