চব্বিশের ছত্রিশ জুলাইয়ে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পরেও এখনও দাপুটে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) আওয়ামীলীগপন্থী স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং নীলদলের পদ-পদবি পাওয়া সুবিধা নেওয়া শিক্ষকরা।
দীর্ঘ ১৫ বছরে বৈষম্যের শিকার ও বঞ্চিত থাকায় শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করেন বঞ্চিত সাদাদলের শিক্ষকরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থার নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সমন্বয়করা।
বঙ্গবন্ধু আদর্শ,বাঙালি জাতীয়তাবাদ,মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা দর্শনে লালিত শিক্ষক সংগঠন নীলদল ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ।মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ।
আওয়ামীলীগপন্থী নীলদল ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের কমিটিতে কে কে ছিলেন:
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় কমিটি গঠন করা হয়।তৎকালীন নীল দলের সমন্বয়ক অধ্যাপক নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদকে আহ্বায়ক ও শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিপ্লব মল্লিককে সদস্য সচিব করে গঠিত এ কমিটিতে সদস্য সংখ্যা ছিল ২৩ জন।
তারা ছিলেন- ড. এস এম নজরুল ইসলাম সহযোগী অধ্যাপক (ডিবিএ), ড. মো. মাসুদ রহমান সহযোগী অধ্যাপক (বাংলা), ড. মো. মমিন সিদ্দিকী সহকারী অধ্যাপক (সমুদ্রবিজ্ঞান), ফয়সাল হোসেন সহকারী অধ্যাপক (মাইক্রোবায়োলজি), রুবেল মিয়া সহকারী অধ্যাপক (ডিবিএ), তনুজা বড়ুয়া সহকারী অধ্যাপক (ইএসডিএম), বাদশা মিয়া সহকারী অধ্যাপক (আইন), মাহমুদুল হাসান সহকারী অধ্যাপক (সিএসটিই), সুলতানা জাহান সোহেলী সহকারী অধ্যাপক (আইসিই), সুব্রত ভৌমিক সহকারী অধ্যাপক (ইইই), শাহিন কাদির ভূইয়া সহকারী অধ্যাপক (বিএলডব্লিউএল), মামুন মিয়া প্রভাষক (পরিসংখ্যান), আল-আমিন প্রভাষক (এমআইএস), মোহাম্মদ ছারোয়ার উদ্দিন প্রভাষক (ফার্মেসি), মুহাম্মদ আব্দুস সালাহ প্রভাষক (এমআইএস), রায়হান আহমেদ রিমন প্রভাষক (অ্যাগ্রিকালচার), ইফতেখার পারভেজ প্রভাষক (পরিসংখ্যান), শেখ মারুফা নাবিলা প্রভাষক (সমাজকর্ম), চয়ন শিকদার প্রভাষক (সমাজকর্ম), অঞ্জন কুমার নাথ প্রভাষক (বিএলডব্লিউএস), ইমাম হোসেন প্রভাষক (মাইক্রোবায়োলজি) ও সঞ্জয় কুমার রায় প্রভাষক (টিএইচএম)। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে নীল দলের ব্যানারে আগামী শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ২০২০ এ অংশগ্রহণ করার জন্যই এ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।পরে নোবিপ্রবি নীল দলের ২০২২-২০২৩ সেশনের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২২ সালে বুধবার (৩০ মার্চ) নবনির্বাচিত এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আনিসুজ্জামান রিমন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সহ-সভাপতি ড. মেহেদী হাসান রুবেল। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল মিয়া ও মো. মুহাইমিনুল ইসলাম সোলিম। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাহানা রহমান, মো. তৌহিদুল আমিন ও রায়হান আহমেদ। কোষাধ্যক্ষ পদে মো. ইফতেখার পারভেজ। দপ্তর সম্পাদক তন্ময় দে।প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তনুজা বড়ুয়া, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শাহিন কাদির ভূঁইয়া, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রাহানুর আলম। এছাড়াও সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন, বিপ্লব মল্লিক, ড. অবন্তি বড়ুয়া, জায়েদ উস সালেহীন, মো. ইকবাল হোসেন, বাদশা মিয়া, সুব্রত ভৌমিক, মো. আল-আমিন।স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ২০২২ সালে ২৫ মে এক সাধারণ সভা শেষে আগামী এক বছরের জন্য ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির নাম প্রকাশ করা হয়।কমিটিতে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স (ফিমস) বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব ওয়ালিউর রহমান আকন্দ (বিপুল)।
কমিটির অন্যান্যরা হলেন- সহ-সভাপতি আফসানা মৌসুমী সহযোগী অধ্যাপক (ইংরেজি বিভাগ), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. মো. নুরুজ্জামান সহকারী অধ্যাপক (অ্যাগ্রিকালচার বিভাগ), সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মো. সিয়াম সহকারী অধ্যাপক (শিক্ষা বিভাগ), সুবর্ণা বিশ্বাস সহকারী অধ্যাপক (ডিবিএ), কোষাধ্যক্ষ নাজমুল হুদা প্রভাষক (টিএইচএম বিভাগ), দপ্তর সম্পাদক আব্দুল করিম,সহকারী অধ্যাপক (আইআইএস), প্রচার সম্পাদক মো. রাসেল হোসাইন প্রভাষক (পরিসংখ্যান বিভাগ), ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুশফিকুর রহমান আশিক সহকারী অধ্যাপক (শিক্ষা বিভাগ)।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন ড. মো. আনোয়ারুল বাশার অধ্যাপক (ফার্মেসি বিভাগ), ড. মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম সহযোগী অধ্যাপক (বিজিই বিভাগ), ভক্ত সুপ্রতিম সরকার সহযোগী অধ্যাপক (ফিমস বিভাগ), এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান সহকারী অধ্যাপক (বিএমএস বিভাগ), সঞ্চিতা দেওয়ানজী প্রভাষক (এসিসিই বিভাগ)।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নোবিপ্রবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন,বঙ্গবন্ধু পরিষদ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু আদর্শ,মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের চেতনা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।তিনি আরোও বলেন আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক কোনো ধরনের কাজের জন্য এই সংগঠন আদর্শভিত্তিক ওই কার্যাবলী পরিচালিত হয় নাই।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এমডি মাসুদ রহমানকে নীল দলের সভাপতি বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি নীলদলের সভাপতি ছিলেন বলে জানান।গেল ২ ডিসেম্বর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি ও নিয়মানুযায়ী বাংলা বিভাগের প্রধান হয়েছেন।রাজনীতি বিষয়ে বললে তিনি জানান ব্যক্তিগতভাবে তিনি রাজনীতি করেন না।
নোবিপ্রবি জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান,মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার ড: মো মফিজুল ইসলামের সাথে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ সভাপতি বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোন লাইন কেটে দেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়ক আল জকি হোসেন বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের সময় যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের এলাকা ও পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে পরিচালনা করেছিল এখনও আওয়ামী লীগের যারা পুনর্বাসিত হয়ে চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে এমনটাই প্রত্যাশা এ সমন্বয়কের।
এছাড়াও তিনি বলেন,নীলদল,বঙ্গবন্ধু পরিষদ,স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ এ সংগঠনগুলো ব্যানারে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে শাসনকার্য পরিচালনা করত। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন শিক্ষক আসুক যারা শিক্ষার্থীবান্ধব। শিক্ষক নামে যারা রাজনীতি করে ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করতে চায় তাদের ক্যাম্পাসে থাকার অর্থ নেই বলে মনে করেন তিনি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সভাপতি ড: মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, গেল ১৫ বছরে সাদা দলের শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার হয়েছে।বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়গুলো অবহিত করা হয়েছে।
এছাড়াও তিনি বলেন, পূর্বের উপাচার্যদের মত নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে অনিয়ম যাতে আর না হয় সে বিষয়টির প্রতি জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলুক।আর যেন কেউ বৈষম্যের শিকার না হয়।ভুক্তভোগীদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে এ প্রত্যাশা করেন তিনি।
এ বিষয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড: মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি নিষিদ্ধ। ক্যাম্পাসে কোনো রাজনীতি দলকে উৎসাহিত করা হচ্ছে না।
যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে যারা বৈষম্যের শিকার হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি তা তদন্ত করছে। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর