দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলেও মাঠের রাজনীতিতে ব্যস্ত ছিল বিএনপি। এখন ব্যস্ত নিজেদের ঘর গোছাতে। চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও কমিটি নেই দক্ষিণ জেলার। জেলা বিএনপির কার্যক্রম চলছে কোনো ধরনের কমিটি ছাড়াই। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ আর হতাশা। তবে যে কোনো সময় ঘোষণা হতে পারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি। এ কমিটি ঘোষণা ঘিরেই চলছে নানা আলোচনা।
নতুন কমিটিতে কারা আসছেন, কিংবা কারা বাদ পড়ছেন, এ নিয়েও সরব দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কমিটির আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদে ইতোমধ্যে ১৫ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে আরো কিছু নতুন নামও শোনা যাচ্ছে। তবে নতুন কমিটিতে আসার সম্ভাবনা নেই সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ আবু সুফিয়ানের। নতুন কমিটিতে আসতে আগ্রহী নন বলে তিনি ইতোমধ্যে কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিএনপির একটি সূত্র বলছে, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তের পর থেকে নতুন কমিটি ঘোষণার দিনক্ষণ গুনছিলেন পদপ্রত্যাশীরা। একইসঙ্গে প্রধান দুইজনকে বহিষ্কার করায় আহ্বায়ক বা সভাপতি কিংবা সদস্য সচিব বা সাধারণ সম্পাদক পদে বসতে অনেকে তৎপরতা চালিয়েছেন জোরালোভাবে। তাদের দলীয় পদে পুনরায় ফিরিয়ে আনায় কমিটি গঠনে নতুন মোড় নিয়েছে।
সূত্র বলছে, কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকেই সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আর দক্ষিণে থাকতে চান না। তিনি কোথায় যাবেন সেই বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
জানতে চাইলে সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ আবু সুফিয়ান বলেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটিতে আসতে আমি আর আগ্রহী নই। ইতোমধ্যে আমি এটি কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছি। আমি চাই অতীতে যারা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারা যেন নেতৃত্বে আসুক।
নগরের রাজনীতিতে ফেরা প্রসঙ্গে আবু সুফিয়ান বলেন, সেই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। দল যেখানে দায়িত্ব দেয় সেখানেই আমি কাজ করবো। আর দল যদি কোন দায়িত্ব নাও দেয় তাহলে কর্মী হিসেবে কাজ করে যাবো।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, যে কোন সময় ঘোষণা হতে পারে দক্ষিণ জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি। এ কমিটিতে আহ্বায়ক পদে নাম শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতার। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং পটিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল, আনোয়ারার সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক পটিয়ার এনামুল হক এনাম, সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ ইদ্রিছ মিয়া, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক সহ-সভাপতি চন্দনাইশের এডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাতকানিয়ার শেখ মো. মহিউদ্দিন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কর্ণফুলির আলী আব্বাস এবং জেলা কমিটির সাবেক সদস্য ও বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ আজিজুল হক।
অপরদিকে,সদস্য সচিব পদে আলোচনায় আছেন বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম হোছাইনী, বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ও সাতকানিয়া বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লেয়াকত আলী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম মনজুর উদ্দীন চৌধুরী, জেলার বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ও আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে বিএনপি নেতা মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন ,আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন ও পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. খোরশেদ আলম।
চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, কমিটি যেহেতু ভেঙে দেওয়া হয়েছে; নতুন কমিটি তো অবশ্যই আসবে। আর নতুন কমিটি প্রক্রিয়াধীন।
দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন বলেন, এমন নেতৃত্ব আসুক যারা সাবেক ছাত্রনেতা। সেই ১/১১ সময় থেকে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের মেয়াদকাল পর্যন্ত দুঃসময়ে যারা মাঠে ময়দানে সক্রিয় ছিল।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুল খায়ের চৌধুরী বলেন, তৃণমূল নেতারা চান কর্মী বান্ধব দক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে দক্ষিণ জেলা কমিটি হোক।
২০০৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি। ওইসময় জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। যার অনুমোদন দিয়েছিলেন দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে ২০১১ সালের এপ্রিলে আবারো দল পুনর্গঠন করা হয়। সেবার জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও গাজী শাজাহান জুয়েলকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক, শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে করা হয় সহ-সভাপতি। তিন বছরের জন্য গঠিত এ কমিটি ৮ বছর পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভেঙে দেওয়া হয়।
একই বছরের ২ অক্টোবর মহানগর বিএনপির সিনিয়র তৎকালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৭ মে কমিটির ৪ নম্বর সদস্য এনামুল হক এনামকে কমিটির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর