উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে তীব্রতা ও ঘন কুয়াশার দাপট বেড়েছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল বাতাস। গত চারদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না জেলায়।
এতে ভোগান্তি আর দুর্ভোগে পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। উত্তরের জেলাগুলোতে এই অবস্থা আরও তিন থেকে চার দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রার উন্নতি হলেও ফের মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে তারা।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩ কিলোমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের জেলায় সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে- পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি, নীলফামারির সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ০ ডিগ্রি, রংপুরে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি, নীলফামারী ডিমলায় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ঘন কুয়াশা ও বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে মধ্যরাত থেকে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা বেড়েছে। এছাড়া, দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না।’জানুয়ারির শেষ দিকে আরও শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তীব্র শীতে বেশি ভোগান্তি আর দুর্ভোগে পড়ছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। ঘন কুয়াশা এবং হিমেল বাতাসে জীবনযাত্রা প্রায় অচল করে দিয়েছে। বেশিরভাগ গ্রাম-চরাঞ্চলের অবস্থা তীব্র শীতের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট পৌরশহরের মিশন মোড়ে কথা হয় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক টোল্লা মিয়ার সাথে। টোল্লা বলেন, গত ৪ দিন ধরে লালমনিরহাটে খুবই ঠান্ডা। তাছাড়া ঘনকুয়াশা থাকার কারণে মানুষজন বাড়ির বাহিরে বের কম হচ্ছে। এতে যাত্রী সংকটে পড়তে হচ্ছে। মাইদুল ইসলাম নামের এক স্কুল শিক্ষকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সারাদিন সূর্যের দেখা না মেলায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সবার। বিশেষ করে তীব্র শীতে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের উপর গত কয়েকদিনের শীত নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়া ঘনকুয়াশা আচ্ছন্ন থাকায় দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে হচ্ছে।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ১০ বেড শিশু রোগীর জন্য বরাদ্দ হলেও বর্তমানে ৩৯ জন শিশু রোগী ঠান্ডা জনিত রোগে ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিনই ডায়রিয়া, নিউমেনিয়াসহ শ্বাসকষ্ট রোগে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন, চিকিৎসা শেষে চলে যাচ্ছেন। ভর্তি হওয়া অধিকাংশরা ডায়রিয়া, নিউমেনিয়ায় আক্রান্ত। অনেকে বেড না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া বয়োবৃদ্ধ রোগীর চাপও তুলনামূলক বেশি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
লালমনিরহাটের সাপ্টিবাড়ি থেকে সেবা নিতে আসা রাজু সরকার জানান, গতকাল ৭ বছর বয়সী ছেলে রিফাত হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পরে। পরে হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে শিশু কিছুটা সুস্থ তবে রোগীর চাপ থাকায় বেড না পেয়ে মেঝেতে চিকিসা নিতে হচ্ছে। পৌরসভার বিডিআর গেট এলাকার সজিব ভূইয়া তার মেয়েকে গত চারদিন পূর্বে হাসপাতালে ডায়রিয়া জনিত কারণে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে শিশু সুস্থ হলেও ঠান্ডা না কমায় শঙ্কা কাটছে না তার।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মোকাদ্দেম বলেন, শীতের সময়টাতে রোগব্যাধী বাড়ছে। কয়েকদিন ধরে শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে। বর্তমানে ১০ বেডের বিপরীতে ২৯ শিশু রোগী ডায়রিয়া, নিউমেনিয়াসহ ঠান্ডা জনিত রোগে ভর্তি রয়েছে। বহির্বিভাগেও রোগীর চাপ বেড়েছে। শীতের সময় ঠান্ডা জনিত রোগ থেকে বাঁচত এবং সুস্থ থাকতে গরম পোশাক পরিধান ও প্রয়োজন ব্যতীত বাহিরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, লালমনিরহাটের শীতার্তদের জন্য ৩২ হাজার কম্বল বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাদ্দকৃত কম্বলের ৯০% এরই মধ্যে তালিকা করে বিতরণ করা হয়েছে। শীতের প্রকোপ বাড়ায় এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে বলেও জানান তিনি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর