
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) একটি নির্মাণাধীন ভবনে মালামাল চুরি করতে প্রবেশ করে তিন শিশু। সেখানে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের ধরে মারধর করে বের করে দেয়। পাশের একটি পোশাক কারখানার জানালা দিয়ে এ ঘটনা দেখেন কয়েকজন শ্রমিক। কারখানা ছুটি শেষে তিন শিশুর মধ্যে একজনকে দেখতে না পেয়ে তাদের মধ্য থেকেই ছড়িয়ে পড়ে ‘নির্মাণাধীন ভবন তৈরিতে রক্ত লাগবে, তাই ওই শিশুকে জবাই করে পুঁতে ফেলা হয়েছে’ এমন গুজব।
এরপরই ওই নির্মাণাধীন ভবনে ভাঙচুর চালায় শ্রমিকরা। মারধর করে নিরাপত্তাকর্মীদের। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, শিল্পপুলিশ, এবং থানা পুলিশ গিয়ে ৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরদিন আবার একই ঘটনার রেশ ধরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দ্বিতীয় দিনের মত তাণ্ডব চালায়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বেপজা কার্যালয়ের বেশকিছু নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওইদিন তাদের মারধরে আহত হন বেপজার তিনজন কর্মকর্তা।
পুলিশ বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কুচক্রী মহল তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইচ্ছাকৃত গুজব ছড়িয়ে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে ইপিজেডে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এর সাথে বহিরাগতরাও যুক্ত হচ্ছে। দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী মহল সুপরিকল্পিতভাবে এসব গুজব ছড়াচ্ছে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) রইছ উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, দুই দিন ধরে দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী কিছু দুর্বৃত্ত চক্র বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে শিল্প খাতকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকার শেলটেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নির্মাণাধীন ভবনের গেটের ভিতরে ৩ জন শিশু প্রবেশ করলে তাদের মেরে ফেলা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। যার ফলে ২৩ জানুয়ারি বিকাল ও রাতে ইপিজেড থানাধীন বিভিন্ন কারখানার ২০০-২৫০ জন শ্রমিক সেখানে গিয়ে শ্রমিকদের ঘর ও বিভিন্ন অফিস ভাঙচুরসহ সেখানে থাকা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি বলেন, যে ৩ জন শিশুকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছিল সেই শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করেছে। বর্তমানে তারা পুলিশের তত্ত্বাবধানে নিজ নিজ অভিভাবকের জিম্মায় আছে।
গুজবের বিষয়ে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে কোনো রকম মিথ্যা প্রচারণা ও গুজবে কান দেবেন না, রাষ্ট্রের ক্ষতি করবেন না, রাষ্ট্রের ক্ষতি মানে আমাদের সবার ক্ষতি।
ইপিজেড আমাদের সবার সম্পদ। কারখানার ওপর যাদের জীবিকা নির্বাহ হয়, সে শ্রমিকরা এসব করতে পারে না। দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী মহল সুপরিকল্পিতভাবে এসব গুজব ছড়াচ্ছে। এর সাথে বহিরাগতরাও যুক্ত হচ্ছে। দেশের পোশাকখাত অস্থিতিশীল হলে এখানে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর