৫০ বছর ধরে আমরা বড়রা ধরে এই দেশটাকে অপশাসন হতে দেখেছি এবং ওরা যখন প্রতিবাদ করে যে স্লোগানগুলো তুলেছে সেগুলো কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে। কারণ দেশের অভিভাবক হিসেবে যারা ক্ষমতায় এসেছেন, যারা ক্ষমতার বাইরে ছিলেন তারা প্রত্যেকেই আমরা অন্যায়ের প্রশ্রয় দিয়েছিলাম বলেই ২০২৪ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন মুরশীদ।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ অডিটোরিয়ামে 'ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার বাংলাদেশে'র অষ্টাদশ জাতীয় যুব সম্মেলনে এসব কথা বলেন শারমীন মুরশিদ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের ইন্টেরিম কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা প্রমুখ।
শারমীন মুরশিদ বলেন, ৭১ এর পরে যা অমীমাংসিত থেকে গেছে সেটার ফলে ২৪ হয়েছে। সেই অমীমাংসিত জায়গাগুলো মীমাংসিত করতে আমরা ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধারা অনেক কিছু করতে পারিনি। দেশের মাটি পেয়েছিলাম, ফ্ল্যাগ পেয়েছিলাম, গড়তে পারিনি।
দারিদ্র্য নিয়ে তিনি বলেন, কারো শক্তি নাই যে আমাকে বিশ্বাস করানো, আমি দরিদ্র। আর যখন আমি দরিদ্রতাকে অস্বীকার করি, তখন দারিদ্র আমার জীবনে আর অস্তিত্ব পায়না। আমি মনে করি এতটাই মৌলিক, এতটাই শক্তিশালী ও এতটাই সহজ দারিদ্রকে শেষ করে দেয়া। অর্থাৎ দারিদ্রকে শেষ করতে হলে প্রথমে মনের জগৎ থেকে দারিদ্রকে মুছে ফেলতে হবে। এবং যে কারণগুলোতে আমি দরিদ্র সেগুলোকে মুছে ফেলতে হবে। তাহলে রইল আমি ধনবান, আমার প্রাচুর্য আছে, আমার মেধা আছে আমার গুণ আছে, আমি পৃথিবী পালটে দিতে পারব।
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ২০২৪ আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশকে ভালোবাসতে শিখেছে, এই মাটিকে ভালোবাসতে শিখেছে, ফ্ল্যাগকে সম্মান করতে শিখেছে। ওরা এবার দেশটাকে গড়বে, যেখানে আমরা পারিনি সেখানে তাদের শুরু। ৭১ এর উত্তরসূরি তোমরা এবং যে মুক্ত সুন্দর সমাজ আমরা চেয়েছিলাম, সেটা করার এখনই সময় এবং সকলে মিলে আমরা সেটা করব। আমি ২৪ টাকেও মুক্তিযুদ্ধ মনে করি। আর যদি আমরা এই যুদ্ধে কোনোভাবে পা পিছলে পরি, তাহলে জেনে রেখ আরেকটা প্রজন্ম তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, ঠিক যেমন তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছ।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনার আমলে (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) বাকস্বাধীনতা, ভোটের অধিকার, মানবাধিকার ছিলো না। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার, ব্যাংক লোট জড়িত। দেশটা দুর্নীতি দূর্বৃত্তায়নের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিলো। সুশাসন ও গণতন্ত্র কার্যকর ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সকলের মধ্যে সম্প্রীতি দরকার।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের ইন্টেরিম কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন, তরুণেরা সংগ্রাম করছে সকল ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। তরুণেরা প্রত্যেকে ছোট ছোট করে সমাজের অসঙ্গতি, অন্যায়, অসমতার পরিবর্তন এনেছে।
'তারুণ্যের প্রত্যয়ে মুছে যাবে ভেদ, গড়ব সুশাসন ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সম্মেলনে প্রায় ৮ শতাধিক স্বেচ্ছাব্রতী তরুণ অংশ নেন। সম্মেলনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আঞ্চলিক বিতর্কের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ক্যাথি বার্কের লেখা 'আই স এ রেভ্যুলেশন' (I saw a revolution) বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া আগামী ১ বছরের জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় ফোরাম কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর