
বাবা আনিছুর রহমান একজন বাস চালক, মা সালমা বেগম পুরোদস্তুর গৃহিণী। বাড়ি উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের হাড়ভাঙ্গা হলেও প্রায় ২০ বছর যাবৎ বাসা ভাড়া থাকেন ফতেপুর ইউনিয়নের কুরনী এলাকায়।
বর্তমানে তারা থাকছেন মাসিক ১২শ টাকার একটি টিনশেড বাসায়। তাদেরই একমাত্র সন্তান সীমা আক্তার। যিনি এবার মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছোট বেলা থেকে সব পরিক্ষায় ভাল ফলাফল করা সীমার এই যাত্রা সহজ ছিল না, সহজ নয় এখনো। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী সীমা মায়ের স্বপ্ন পূরণে ছিলেন দৃড়প্রতিজ্ঞ।
এসএসসিতে গোল্ডেন পাওয়া সীমা দেশের নাম করা কোন কলেজে নয় ভর্তি হয়েছিলেন স্থানীয় মির্জাপুর সরকারি কলেজে। এইচএসসি তে গোল্ডেন জিপিএ নিয়ে পাস করার ব্যাপারে আশাবাদী সীমা গোল্ডেন জিপিএ না পেলেও জিপিএ-৫ পেয়েই এইচএসসি শেষ করেন।
এমন ফলাফলের পর অন্যরা যখন ভালো ভালো কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখনো সীমা ওই ১২শ টাকার ভাড়া বাসায়। মুখ ফুটে না বললেও আর্থিক সীমাবদ্ধতা যে সীমাকে টেনে ধরার চেষ্টা করেছে বার বার তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু ধমে যায়নি সীমা। ঘরে বসে সাধ্যের মধ্যে অনলাইনে ভর্তি কোচিংয়ে অংশ নেন সীমা। শেষে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে জেলার একটি কোচিংয়ে পরিক্ষায় অংশ নেন তিনি।
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠেননি সীমা। কিন্তু করোনাকালের একটি ঘটনা তার মনে দাগ কাটে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তার নানা। মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারদের আচরণ তাকে ও তার মাকে মর্মামত করে। আর্থিক অস্বচ্ছলতা তাকে পীড়া দেয়। সেই ঘটনার পর তার মা তাকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখে। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই ডাক্তার হওয়ার লক্ষ্যে হাটেন সীমা। এভাবেই মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পেছনের গল্পগুলো প্রতিবেদককে জানান সীমা।
সীমার মা সালমা বেগম বলেন, লেখাপড়ার বিষয়ে আমরা হয়তো সীমার সব চাহিদা পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু ওর চাহিদা পূরণের জন্য আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছি। ওর বাবা শতকষ্ট হলেও সাধ্যমতো সীমার চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করেছে। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি গর্ব করি ও যেন ডাক্তার হয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করতে পারে।
সীমা বলেন, কেউ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, কেউ কেউ কটাক্ষ করেছে। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থাও স্বচ্ছল না। কিন্তু আমি দমে যাইনি। বিশ্বাস ছিল ভাল কিছু করতে পারবো। আমি ডাক্তার হয়ে বিশেষভাবে দরিদ্র মানুষের পাশে থাকতে চাই। আর্থিক সাহায্য না আমি শুধু মানুষের দোয়া চাই।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর