বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'ভাগ্নিটা এমপি হয়েছে তাকেও ডুবিয়ে দিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামীলীগের দুর্নীতি দিল্লি থেকে ইংল্যান্ডে রপ্তানি হয়েছে। ২৮ লক্ষ কোটি টাকা যে পাচার করলেন-করেছেন তো এভাবেই। গোটা জাতিকে আপনারা জ্ঞান শূন্য, অন্ধকারে ফেলার যে চক্রান্ত সেটা আপনারা সম্পন্ন করেছেন। দরকার নেই বাংলাদেশে ভালো কোন ইঞ্জিনিয়ার, ভালো কোন ডাক্তার, হোক বিজ্ঞানী হোক বা বড় কোন সাহিত্যিক তার দরকার নেই। কোন একটা দেশ আপনাকে এসব দিয়ে দিবে।'
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী এবং জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের যুগ পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, '১৭ বছরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে এডুকেশন সেক্টরকে। শিক্ষাতো মানুষকে নৈতিকভাবে উন্নত করে, মানুষের চরিত্রকে শক্তিশালী করে। কিন্তু শেখ হাসিনা শিক্ষাকে ধ্বসীয়ে দিয়েছে। শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁস আর প্রশ্নপত্র ফাঁস। এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের যেন এক প্রতিযোগিতা চলেছে। কি পিএসসিতে, কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এডমিশন টেস্টে, কি আপনার সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে। প্রত্যেকটি জায়গায় প্রশ্ন ফাঁস। প্রশ্ন ফাঁস যেন শেখ হাসিনার আমলে একটা সংস্কৃতি একটা কালচারে পরিনত হয়েছে। কেন ? উনি চাননি। উনি চাননি দেশের লোক উন্নত হোক, নৈতিকভাবে উপরে উঠুক তিনি তা চাননি। যার ফলশ্রুতি হয়েছে ভয়াবহ।'
রিজভী আরো বলেন, 'সব প্রতিষ্ঠান তার আত্মীয়-স্বজনের নামে। সব প্রতিষ্ঠান তাদের (শেখ পরিবার) নামে। শেখ কামালের নামে সেতু কেন ? শেখ কামালের নামে তো ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগ আছে। সেটারতো কোনদিন কোন ব্যাখ্যা দেননি। সেটা তো আপনি জনগণের কাছে ক্লেয়ার করেননি। আপনার পুরো পরিবারের মধ্যে একজন সৎ মানুষ আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইংল্যান্ডে যে ভাগ্নি আপনার এমপি হয়েছে আপনি তাকেও ফ্লাট কিনে দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের দ্বারা। তাকেও দিয়েছেন তার ছোট বোন রুপন্তীকেউ দিয়েছেন। এইতো হচ্ছে আপনার বৈশিষ্ট্য। আপনার আমলে কোথায় পাঠাগার হবে, কোথায় গ্রন্থাগার হবে কোথায় একটা ভালো স্কুল হবে সেটা হয়নি। হাসিনার মত পৃথিবীর ডিটেক্টররা তাই করে। ওরা আপনাদের ফ্লাইওভার দেখায়, মেগা প্রজেক্ট দেখায় এর বিপরীতে হাসপাতাল আর স্কুল ধ্বংস করে দেয়। যেখান থেকে টাকা মারা যাবে, টাকা পাচার করা যাবে। অন্যরা যা করেছেন শেখ হাসিনা তাই করেছেন। পৃথিবীর সকল দুর্নীতিবাজরা, ফ্যাসিস্টরা, দানবরা যেই কাজ করেছেন স্বৈরাচাররা যে কাজ করেছেন শেখ হাসিনা তাই করেছেন।'
'আমরা ৫ই আগস্টের পর নিরাপত্তা পেয়েছি, এখন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারি। অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন তাদের মাথায় রাখতে হবে আপনারা সংস্কার করবেন করুন এমন সংস্কার করুন যাতে আর কোনো প্রতিবাদ সরকারের উত্থান না হয়। সে ধরনের একটা দৃষ্টান্ত আপনার স্থাপন করুন। তা না হলে তো তারা নানাভাবে মাথা চাড়া দিবে। এখন চালের দাম কমেনি। কোনভাবেই তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এক চালের দাম না কমানোর কারণে শেখ মুজিবুর রহমানের পাহাড় সমান জনপ্রিয়তা ধুলায় লুটিয়ে গেল। এবং ৭৫এ তার পরিবারসহ যে মর্মান্তিক মৃত্যু হল কিন্তু মানুষ কেও ইন্নালিল্লাহি পড়লো না। এটা আওয়ামী লীগ কোনদিন বিশ্লেষণ করেনি। কেন পরলো না মানুষ ? যে যে আমার বাবার রাজত্বে বাংলাদেশ ভালোমতো চলেনি। যদি দুর্ভিক্ষে মানুষ কলা গাছের পাতা আম গাছের পাতা চিবিয়ে খায় আর একই সময়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সোনার মুকুট পড়ে যদি ভাইয়ের বিয়ে হয় এটা মানুষ ভালোভাবে নেবে না। এই বোধ শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগের নেতাদের ছিল না। যদি থাকতো তাহলে তারা আবার দ্বিতীয় বাকশাল, দ্বিতীয় গণতন্ত্র হরণ করে গোটা দেশকে আরো একটি বন্দিশালা বানাতে পারতো না।'
অন্তর্বর্তী সরকারকে বলি- আর যেন দেশে আয়নাঘর না হয়। আপনি জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলবেন, আপনি অনেক সংস্কারের কথা বলবেন কিন্তু মানুষের পেটে ক্ষুধা থাকবে তখন মানুষ ওই ঘোষণা কিছুই শুনবে না। আপনার এটা কন্ট্রোল করতে হবে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সিন্ডিকেট বাজদের ধরতে হবে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এবং সমাজের মধ্যে একটা স্বস্তি আনতে হবে। মানুষ যেন কমপক্ষে মোটা চাল এবং পোশাক পরতে পারে সে নিশ্চয়তা দিতে হবে। এ নিশ্চয়তা জিয়াউর রহমান করেছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবির, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর গোলাম হাফেজ কেনেডি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর রোবায়েত ফেরদৌস, জিয়া স্মৃতি পাঠাগার মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি জিয়াউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফাসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর