
রাজবাড়ীতে এমপিও নীতিমালা বহির্ভূতভাবে বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেলিনা আক্তার নামে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে শিক্ষকতা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার মাজবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা (বাংলা) সেলিনা আক্তার ১লা নভেম্বর-১৫ তারিখে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে অদ্যবধি পর্যন্ত শিক্ষাকতা করে যাচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৩০১১০১৩০১ নং এমপিও কোডের য়ার এমপিও ইনডেক্স নং এন১১৩৩৩৮১।
সরেজমিনে অনুসন্ধান কালে দেখা যায়, সেলিনা আক্তার তথ্য গোপন করে এমপিও নীতিমালা লঙ্ঘন পূর্বক এনটিআরসি'র ইনডেক্সধারী শিক্ষক বদলি ও নতুন শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত পরিপত্র প্রকাশ হলে, তিনি মাজবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষকতা করার তথ্য গোপন করে বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সদ্য নতুন সহকারি শিক্ষিকা (বাংলা) হিসাবে ১লা ফেব্রুয়ারি-২২ তারিখে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করার পর এমপিও আবেদন করেন। যার বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভি৩৩০১০১১৩০১ নং এমপিও প্রতিষ্ঠানের এমপিও শীটে এ্যাট১১৩৩৩৮১ নং ইনডেক্স ধারী হিসেবে এমপিও শীটে নাম আসে। ১লা ফেব্রুয়ারি-২২ তারিখে যোগদান করে তিনি ১৭ই ফেব্রুয়ারি-২২ পর্যন্ত বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এবং বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৭ দিন সহকারী শিক্ষিকা (বাংলা) হিসেবে শিক্ষাকতা করার পর চাকরি করতে অনিচ্ছুক অথবা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্র জমা না দিয়ে এমপিও নীতিমালা লঙ্ঘন করে বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পুনুরায় সাবেক কর্মস্থল মাজবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে অনৈতিক প্রন্থায় যোগদান করেন।
অন্যদিকে মাজবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ১৭ দিন তিনি অসুস্থ মর্মে মেডিকেল সার্টিফিকেট ইস্যু করে যোগদান করেছেন মর্মে জানান, মাজবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছমির উদ্দিন।
নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে মাজবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক সহকারী শিক্ষক জানান, সেলিনা আক্তার বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় যোগদানের পূর্বে মাজবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় হতে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে যান। সেখানে এমপিওভুক্ত হওয়া অনিশ্চিত মনে করায় তিনি পুনরায় মাজবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎসময়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককের সাথে অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক লেনদেন করে এমপিও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ও দেশের প্রচলিত আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে পুনরায় সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করে শিক্ষাকতা করে যাচ্ছেন। যা রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে ঘোর প্রতারণার শামিল।
এ বিষয়ে সরকারি শিক্ষিকা (বাংলা) সেলিনা আক্তারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি প্রতিষ্ঠানে এসে সামনাসামনি কথা বলতে বলেন। কিন্তু , প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এ বিষয়ে তার বক্তব্য চাইলে তিনি বক্তব্য প্রদান করবেন না মর্মে জানান। পরবর্তীতে তার স্বামী মেহেদী হাসান প্রতিবেদকের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকিও প্রদান করেন। সেই সাথে, নিউজ প্রকাশ করিলে শ্রীলতা হানি ইভটিজিং সহ নানা মিথ্যা মামলায় হয়রানির ভৃতিও প্রদর্শন করেন।
বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুতুবউদ্দিন মোল্লার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সেলিনা আক্তার এনটিআরসির নিয়োগের মাধ্যমে সহকারি শিক্ষিকা (বাংলা) নতুন শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন। এবং তিনি এমপিও নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-নীতির কোন তোয়াক্কা না করে পহেলা ফেব্রুয়ারি-২২ হইতে ১৭ই ফেব্রুয়ারি-২২ পর্যন্ত চাকরি করে কাউকে কিছু না বলে বা পদত্যাগ পত্র জমা না দিয়ে তিনি চলে যান। পরে জানতে পারি তিনি সাবেক কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। এমপিও কর্তনের জন্য আমরা শিক্ষকমন্ডলী বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ও রেজুলেশন করা হয়। তার এমপিও কর্তনের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এর মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদপ্তরে চিঠি মারফতে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মাজবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছমির উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সেলিনা আক্তার পদত্যাগ পত্র জমা না দিয়ে স্কুল ত্যাগ করেন এবং পরবর্তীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে শোকজ করা হলে তিনি অসুস্থ ছিলেন মর্মে মেডিকেল সার্টিফিকেট সহ জবাব প্রদান করেন। কিন্তু, অনুপস্থিত সময় তিনি বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা বাংলা হিসাবে যোগদান করে শিক্ষাকতা করেছেন। উক্ত সময় তিনি অসুস্থ দেখে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে এবং দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিও শীটে এমপিওতে নাম আছে মর্মে প্রশ্ন করলে তিনি তার উওর না দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার কথা বলে এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে বালিয়াকান্দি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পারমিস সুলতানা বলেন, একই ব্যক্তি তথ্য গোপন করে দুইটা ইস্কুলে চাকরি করা এবং এমপিও ভুক্ত আছে এমন তথ্য আমার জানা নেই আমি বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। আমি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পেলে কর্তৃপক্ষকে জানাবো কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে উভয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে এমপিও নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে কিনা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর