উভয়পক্ষ যেন সুষ্ঠুভাবে তাদের ইজতেমা সম্পন্ন করতে পারে সে লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনামূলক পরিপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে জারি করতে হবে। এমন সব দাবি নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সচেতন ছাত্র সমাজ।
আজ সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকায় এই সংগঠনের মুখপাত্র বলেন, তাবলীগ জামাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আজকে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। তাবলীগ জামাত মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক এবং সারা বিশ্বে ইসলামের দাওয়াতী কার্যক্রমের অন্যতম মাধ্যম। টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় জমায়েত। এই ইজতেমার আগত বিদেশি মেহমানদের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় হয় এবং অর্থনৈতিকভাবেও দেশ উপকৃত হয়। তাবলীগ জামাতের বিভাজনের পর থেকে বিগত বছরগুলোতে সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তাবলীগ জামাতের বিবদমান উভয়পক্ষ সুষ্ঠুভাবে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বৈষম্য বিরোধী সরকার বিগত ০৪ ও ০৭ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে বিবদমান পক্ষদ্বয়ের সাথে বৈঠক করে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের তারিখ ঘোষণা করেছিল।
সরকারের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল "আগামি ৩১ জানুয়ারি হতে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার ১ম পর্ব মাওলানা জুবায়ের অনুসারীগণ আয়োজন করবেন। এবং আগামি ৭ হতে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার ২য় পর্ব মাওলানা সাদ অনুসারীগণ আয়োজন করবেন।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়েছিল, ১ম পর্বের আয়োজনকারীগণ তাদের আয়োজন শেষে ইজতেমার মাঠ বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা এর নেতৃত্বে গঠিত বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতি সংক্রান্ত কমিটিকে ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ মঙ্গলবার বেলা ৩.০০ ঘটিকার মধ্যে বুঝিয়ে দিবেন। ২য় পর্বের আয়োজনকারীগণ ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ বিকালে উক্ত কমিটির নিকট থেকে ইজতেমার মাঠ বুঝে নিবেন এবং ইজতেমা শেষে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ দুপুরে উক্ত কমিটির নিকট মাঠ হস্তান্তর করবেন।
উক্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তাবলীগের উভয় পক্ষই তাদের ইজতেমা নির্ধারিত তারিখে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার কথা। তবে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, মাওলানা জোবায়ের অনুসারীগণ প্রজ্ঞাপনের শর্ত ভঙ্গ করে ৩, ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি তাদের দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন যা পূর্বে জারিকৃত সরকারি প্রজ্ঞাপনের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এছাড়া ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ মাওলানা সাদ অনুসারীদের ইজতেমা আয়োজনের কথা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে, যদিও এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো প্রজ্ঞাপন এখনো জারি করা হয়নি।
বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নিয়ে সরকারের এই অস্পষ্টতা এবং ধোঁয়াশা জাতিকে আবারও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখোমুখি করছে।
আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, উভয়পক্ষ যেন সুষ্ঠুভাবে তাদের ইজতেমা সম্পন্ন করতে পারে এবং যার যার ইজতেমায় বিদেশি মেহমানরা নির্বিঘ্নে আসতে পারে সে লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনামূলক পরিপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে জারি করতে হবে। উভয় পক্ষকে সমান সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে সরকারের উচিত ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা।
যদি কোন পক্ষ ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে না পারে তাহলে এর পুরো দায়ভার সরকারের উপর বর্তাবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হবে। আমরা সচেতন ছাত্র সমাজ চাই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট না হোক।
অতএব, জুলাই বিপ্লবের ফসল বৈষম্য বিরোধী এই সরকারের সহযোগী হিসেবে সচেতন ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে আহ্বান করছি, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাবলীগ জামাতের উভয় পক্ষের চলমান বৈষম্যের ইনসাফ ও ন্যায়ভিত্তিক স্থায়ী সমাধান করতে হবে অন্যথায় দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা সচেতন ছাত্রসমাজ বিকল্প কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
সচেতন ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও মোবারকবাদ।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর