বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে নবীজির মেরাজ সংঘটিত হয়। ঐতিহাসিক মেরাজে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর সান্নিধ্যে ডেকে নিয়ে উম্মতে মুহাম্মদীকে পুরস্কারস্বরূপ কয়েকটি বস্তু প্রদান করেন। নিম্নে ধারাবাহিকভাবে তা উল্লেখ করা হলো—
১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। তবে এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফজিলতের দিক দিয়ে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সমান।
এ বিষয়ে হাদিসের কিতাবে দীর্ঘ একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যাতে প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের বিধান লাভ এবং মুসা (আ.)-এর পরামর্শে একাধিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা কমে পাঁচ ওয়াক্ত হওয়ার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৩০০)
২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত। এ আয়াতগুলোতে উম্মতে মুহাম্মদীর প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও অনুগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মেরাজের রজনীতে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলো। এটি ষষ্ঠ আসমানে অবস্থিত। জমিন থেকে যা কিছু উত্থিত হয় তা সে পর্যন্ত এসে পৌঁছে এবং সেখান থেকে তা গ্রহণ করা হয়। তদ্রূপ ঊর্ধ্বলোক থেকে যা কিছু অবতরণ হয় তা-ও এ পর্যন্ত এসে পৌঁছে এবং সেখান থেকে তা গ্রহণ করা হয়।
তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তিনটি বিষয় দান করা হলো। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং শিরকমুক্ত উম্মতের মারাত্মক গুনাহ তাওবার মাধ্যমে ক্ষমার সুসংবাদ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩২০)
এটি এই উম্মাহর জন্য কতটা মর্যাদাপূর্ণ তোহফা তা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশেষ করে শয়তানের আক্রমণ থেকে মুমিনের রক্ষার ঢাল হলো এই আয়াত দুটি। সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিন সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে একটি কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাব থেকে তিনি দুটি আয়াত নাজিল করেছেন।
সেই দুটি আয়াতের মাধ্যমেই সুরা বাকারা সমাপ্ত করেছেন। যে ঘরে তিন রাত এ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করা হয়, শয়তান সেই ঘরের কাছে আসতে পারে না। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৮২)
৩. উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে যারা কখনো শিরক করেনি, তাদের ক্ষমা করার সুসংবাদ প্রদান এবং কবিরা গুনাহ ক্ষমা করা। তবে অন্যান্য হাদিসের বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, এটি তাওবার শর্তযুক্ত। হুকুকুল্লাহর ক্ষেত্রে বান্দা তাওবা দ্বারাই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। তবে হুকুকুল ইবাদের ক্ষেত্রে তাওবার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকেও ক্ষমা চাইতে হবে অথবা আখিরাতে আল্লাহ হকদারকে এত পরিমাণে নিয়ামত দেবেন যে সে খুশি হয়ে ক্ষমা করে দেবে।
মোটকথা, কবিরা গুনাহের ক্ষমা তাওবা ও শিরকমুক্ত ঈমানের শর্তযুক্ত। যেমনটি হাদিসে এসেছে, আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে বান্দা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে এবং এ অবস্থার ওপরে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে? তিনি বললেন, যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে তবুও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে তবুও। আমি বললাম, যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও? তিনি বললেন, যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও। আবু জরের নাক ধূলি ধূসরিত হলেও। আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারি) বলেন, এ কথা প্রযোজ্য হয় মৃত্যুর সময় বা তার পূর্বে, যখন সে তাওবাহ করে ও লজ্জিত হয় এবং বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, তখন তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮২৭)
৪. ইবরাহিম (আ.) থেকে বিশেষ তাসবিহ উপহার। রাসুলুল্লাহ (সা. ) বলেছেন, মেরাজের রাতে আমি ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতকে আমার সালাম পৌঁছিয়ে দিন এবং তাদের জানান যে জান্নাতের জমিন অতিসুগন্ধিসমৃদ্ধ এবং সেখানকার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। তা একটি সমতলভূমি এবং তার গাছপালা হলো ‘সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদু লিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬২)
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর