‘ট্রেন পুরোপুরি বন্ধের বিষয়টি যাত্রীদের এসএমএসের মাধ্যমে অন্তত জানানোর দরকার ছিল কর্তৃপক্ষের। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তে অনেক যাত্রী ভোর সকালে স্টেশনে এসে ফিরে গেছেন। ট্রেন বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের জানায় না। একটা দুঃখজনক ব্যাপার। আমাদের প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করবে।’
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে এসে ট্রেন বন্ধের কথা শুনে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন নবিউল আলম নামে এক যাত্রী। মঙ্গলবার বিকেলে কথাগুলো এভাবে বলেছিলেন কক্সবাজার এক্সপ্রেসের যাত্রী নবিউল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ট্রেন বন্ধ ভালো কথা। এই কথা তো আর সব যাত্রী জানে না। আর জানারও কথা না। যাত্রীদের স্টেশনে এসে অযথা ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। আমরা তো অনেক আগে টিকেট কেটেছি। সেখান থেকে কয়েক পয়সা খরচ করে একটা মেসেজ দিতে পারতো। কিন্তু দেয় না।’
জানা গেছে, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন প্রদান এবং আনুতোষিক সুবিধা দেয়ার বিষয়ে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সারা দেশের মতো ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে কক্সবাজারে।
ট্রেন বন্ধের খবর না পেয়ে অনেক যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন। আর ট্রেন যাত্রীদের বাড়তি চাপ পড়েছে বাসে। ট্রেন বন্ধ থাকায় অনেক পরিবহণ মালিক বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। আবার কেউ কেউ বাড়ানোর পরিকল্পনাও করছে।
মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার রেল স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় অনেক যাত্রীকে বসে থাকতে দেখা গেছে। তাদের অনেকেই ট্রেন চলাচল বন্ধের খবর জানতেন না। সকাল সোয়া ৯টার দিকে স্টেশনে অনেক যাত্রীকেই ট্রেনের খবর জানতে আসতে দেখা যায়। ট্রেন চলবে না জেনে অনেকেই স্টেশন ছেড়ে চলে যান। তবে বয়স্ক ও নারীদের স্টেশনেই অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটের দুটি ট্রেনের মধ্যে কক্সবাজার এক্সপ্রেস সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়ায় আজ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের মাস্টার গোলাম রব্বানী।
তিনি বলেন, আজ কক্সবাজার থেকে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা যাওয়ার কথা এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে স্পেশাল ট্রেনটি যাওয়ার কথা ছিল। ধর্মঘটের কারণে মঙ্গলবার কোনো ট্রেন কক্সবাজার আসেনি এবং যেতেও পারেনি। যারা এই দুটি ট্রেনের অনলাইনে কিংবা কাউন্টারে এসে টিকিট কিনেছেন তাদের পুরো টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়টি অনেক যাত্রী জানে না। তাদেরকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গ্রিন লাইন পরিবহনের কক্সবাজার ইনচার্জ আবদুল্লাহ আজম জুয়েল বলেন, ‘ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনের যাত্রীরা বাস কাউন্টারে আসছেন। এতে করে বাসের ওপর চাপ বেড়েছে। অন্য দিনের মতো ১০টি বাস কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাচ্ছে। তবে যাত্রীর চাপ এভাবে বাড়লে আগামীকাল বুধবার থেকে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।’
সৌদিয়া পরিবহনের কক্সবাজার ইনচার্জ নিরূপম পাল জানিয়েছেন, একটু যাত্রীর চাপ রয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে বাসগুলো কক্সবাজার থেকে ঢাকায় বা চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় ৪০টি সিটের মধ্যে অনেক সময় কম যাত্রী নিয়ে যেতে হতো। এখন তা বুকিং হচ্ছে। বাস বাড়ানোর পরিস্থিতি এখনও হয়নি। অন্যান্য পরিবহনের একই অবস্থা বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার শহরের ঝাউতলাস্থ শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মো. রুবেল পারভেজ বলেন, ‘প্রতিদিন কক্সবাজার থেকে ঢাকা ছাড়ে ১৬ থেকে ১৮টি বাস। কিন্তু আজকে যাত্রীর চাপ বাড়ায় অতিরিক্ত ৩টি বাস যোগ করতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে মঙ্গলবার ২১টি বাস কক্সবাজার থেকে ঢাকা ছাড়বে।’
এস আলম পরিবহনের কক্সবাজার ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন জানান, স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে টিকিটের চাহিদা একটু বেশি। এখনও বাস বাড়ানোর মতো অবস্থা হয়নি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়টি নিয়ে অবগত আছি। কক্সবাজারে রেলের যাত্রী সর্বোচ্চ ২ হাজার। কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন ঢাকায় আসা-যাওয়া করে ৪০০ বাস। এতে দুই হাজার যাত্রী এই ৪০০ বাসের মধ্যে নেওয়া সম্ভব। তবে যাত্রীর চাহিদা থাকলে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কোনোভাবেই যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা না হয় এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।’
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর