হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পাহাড়ের পাদদেশ কেটে সিলিকা বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। বিকট শব্দে দিনরাত অবিরাম চলছে বালু উত্তোলন। অবৈধভাবে সংরক্ষিত পাহাড়ের পাদদেশ কেটে বালু উত্তোলনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বসতভিটাসহ পরিবেশের ভারসাম্য। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন পাহাড়ে বসবাসকারী চা শ্রমিক বাসিন্দারা। আর প্রশাসন থেমে আছে অভিযানের মধ্যেই। কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বালুখেকোরা। তারা এতটাই প্রভাবশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদফতর ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করলেও থেমে নেই প্রভাবশালী এই চক্র।
এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিন মিয়া বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান করছি। সবশেষ মঙ্গলবার রাত ১০টায়ও আমি অভিযান করেছি। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোনো মেশিন বা কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে পাহাড়ের পাদদেশ কেটে বালু উত্তোলন হচ্ছে এমন চিত্র আমরা দেখতে পেয়েছি। আমাদের অভিযানের খবর পেয়ে তারা হয়তো সবকিছু গুটিয়ে নিয়েছে। তবে সামনে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেব। এভাবে পাহাড় ধ্বংস হতে দেব না।
পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক হরিপদ চন্দ্র দাশ বলেন, ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর পানছড়ি এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অপরাধে ২১ জনের নামে মামলা হয়েছে। বর্তমানে মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, পানছড়ি এলাকার আসমত উল্লাহর ছেলে আমজত উল্লাহর নেতৃত্বে চলে পাহাড় কাটার এই মহোৎসব। তার এই বালু উত্তোলন কাজে প্রত্যক্ষ সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন একই এলাকার মাহফুজ মিয়া, স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদ মিয়ার ছেলে ফয়েজ মিয়াসহ ২০-২৫ জনের একটি দল।
সরেজমিন দেখা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের পানছড়ি মৌজার রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলা গাধাছড়ায় বিকট শব্দে চলছে ডজনখানেক ড্রেজার মেশিন। বালুখেকোদের ড্রেজারের তা-বে ছড়ার আশপাশে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে সংরক্ষিত রঘুনন্দন পাহাড়ের একাধিক টিলায়। পার্শ্ববর্তী বস্তিতে ভাঙন দেখা দেওয়ায় বসতভিটা হারানোর শঙ্কায় পড়েছে অন্তত ৬টি গারো পরিবার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংরক্ষিত বনের টিলা কেটে বালু উত্তোলন করায় বালুখেকোদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদফতরের মামলা হওয়ার পরেও কিছুতেই থামছে না তাদের তা-ব। এতে একদিকে যেমন সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে চলাচলের রাস্তা, সংরক্ষিত বন ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপের অভাবে সংরক্ষিত বন ধ্বংসের পাশাপাশি চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পী রানী বাউরী বলেন, সারা দিন চা বাগানে কাজ করে রাতে বালু তোলার মেশিনের শব্দে ঘুমাতে পারি না। এ ছাড়া কখন ভিটেমাটি ধসে পড়ে যায় এই ভয়ে সারাক্ষণ থাকি। আরেক বাসিন্দা শিবলাল মুণ্ডা বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী বালু মাফিয়া চক্র অবাধে সিলিকা বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়েছে আমার বাড়ির উঠোন। যেকোনো সময় ভেঙে বিলীন হয়ে যেতে পারে আমার সবশেষ আশ্রয়স্থল বসতভিটা। বালুখেকো চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ তো দূরে থাক, কথা বললেই হামলার শিকার হতে হয় আমাদের।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, অবাধে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মূল্যবান সিলিকা বালু উত্তোলনের ফলে পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি প্রাণ-প্রকৃতি ও স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এদের থামানো না গেলে পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসবে। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর