মো: সাইফুল আলম সরকার, ঢাকা: জয়িতা ফাউন্ডেশনের নারী উদ্যোক্তারা সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের নারী জাগরণের আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা সরকারকে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু বর্তমানে নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের অস্তিত্বের সংকটে পড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে রাগা প্লাজা থেকে উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করেছে।
এরই প্রেক্ষিতে ২৭ জানুয়ারী ২০২৫ জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্মিত জয়িতা টাওয়ারে পুর্নবাসনের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
তারা বলেন, জয়িতা ফাউন্ডেশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ নারী উদ্যোক্তাদের সংস্থা। সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করা নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সমিতি নিয়েই এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানকালীন সময় এবং এর পর থেকে আমরা এই সংস্থার অধীনে থেকে দেশের নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছি। এর মাধ্যমে আমরা নিজেরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি দেশের সুবিধাবঞ্চিত নারী সমাজকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার কাজে সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিটি সমিতির মাধ্যমে শত শত নারী তাদের তৈরিকৃত পণ্য বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে।
জয়িতা ফাউন্ডেশনের নারী উদ্যোক্তারা সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের নারী জাগরণের আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা সরকারকে সহযোগিতা করেছে। নিজেদের সাবলম্বী করার পাশাপাশি আমরা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অংশ নিয়েছি।
জয়িতা ফাউন্ডেশনের নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিটি সমিতিকে নির্দিষ্ট জামানতের বিনিময়ে রাজধানীর রাপা প্লাজায় পণ্য প্রদর্শন ও বিপননের জন্য দোকান বরাদ্দ দেয় সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, জয়িতা ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণের পর উদ্যোক্তা সমিতিগুলোকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে এবং প্রতিটি সমিতিকে একটি দোকান বরাদ্দ দেয়া হবে। মূলত সেই বরাদ্দের বিপরীতে প্রতিটি সমিতি ফাউন্ডেশনকে জামানত প্রদান করে।
সেই স্বপ্ন নিয়েই আমরা প্রতিটি সমিতি গত এক যুগের বেশি সময় ধরে নিরলস পরিশ্রম করে সারা দেশের নারীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। অথচ জয়িতা ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণের পর সরকার সেখানে সমিতিগুলোকে দোকান বরাদ্দ না দিয়ে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে রাগা প্লাজা থেকে উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করেছে। ৩১ মার্চের পর জয়িতা ফাউন্ডেশনের নারী উদ্যোক্তাদের সমিতিগুলো কোথায়, কীভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবে, সেই ব্যাপারে কোন দিক নির্দেশনা নোটিশে দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে ভারা জানিয়েছে, ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ভবনে সরকার ভিন্নভাবে দোকান বরাদ্দ/ব্যবসা পরিচালনা করবে। সমিতিগুলো সেখানে পণ্য সরবরাহ করবে। এমনকি অবিক্রিত পণ্য নির্ধারিত সময় গর ফেরত নিতে হবে। ড্রাই ফুড ও রেগুলার ফুড এর বিষয়েও স্পষ্ট কোন সিদ্ধান্ত নেই মৌখিকভাবে বলা হয়েছে টেন্ডার এর মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে বরাদ্দ দেবে যদি টেন্ডার হয় তাহলে তৃণমূল নারী উদ্যোক্তারা কিভাবে এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে আপনারা বলেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত জয়িতা ফাউন্ডেশনের নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিটি সমিতি এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট শত শত নারীর সাথে প্রতারণার শামিল। একইসাথে এর মাধ্যমে নারী বিকাশের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়ার পায়তারা করা হচ্ছে। ফলে সারাদেশের শত শত নারী উদ্যোক্তা কর্মহীন হয়ে পড়বে এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বী হবার পথ রুদ্ধ হবে। উল্লেখ্য পতিত সরকার নারী উদ্যোক্তাদের বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে জনগণের আকাঙ্খা এবং প্রত্যাশার উপর প্রতিষ্ঠিত নতুন সরকারও জয়িতা ফাউন্ডেশনের নারী উদ্যোক্তাদের বঞ্চিত করার পথ থেকে এখনো সরে আসেনি।
আমরা আজকের সংবাদ সম্মেলন মাধ্যমে জানাচ্ছি যে, রাপা প্লাজা থেকে জয়িতা ফাউন্ডেশনের নারী উদ্যোক্তাদের উচ্ছেদ চেষ্টা বন্ধ এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্মিত জয়িতা টাওয়ারে পুর্নবাসনের দাবি জানাচ্ছি।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হবার জন্য আবারও আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং সারাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
দেশকে ভালো রাখা, সমাজকে ভালো রাখা, পরিবারকে ভালো রাখা এবং সন্তানকে ভালো রাখা সেটা আমাদের অপরাধ কিনা? আমরা সেই মা জাতি,সেই জয়িতা, সেই অদম্য নারী, ঘর থেকে নেমেছি ২০১১ সালে প্রায় ১৪ বছর আগে এখন বঞ্চিত হতে চলেছি ভাই আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ফিরে যাবার পথ নেই। শুরু থেকে আমরা জেনে এসেছি আমরা জয়িতা টাওয়ারে যাবো কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে, জয়িতা টাওয়ারে আমাদের নেওয়ার বিষয়ে কোন স্পষ্ট পদক্ষেপ নেই যেটা জয়িতা ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে উচ্ছেদের নোর্টিশ করেছে আমরা এখন আমাদের সংগঠনের সদস্য এবং কর্মীদের নিয়ে কোথায় যাবো? তাই সরকারের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট কিছু যৌক্তিক দাবি পেশ করছি।
১) রাপা প্লাজা থেকে জয়িতা ফাউন্ডেশনের নারী উদ্যোক্তাদের উচ্ছেদ চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্মিত জয়িতা টাওয়ারে পুনর্বাসন করতে হবে।
২) ২০১১ সালে তৎকালীন সময়ে ৬ বিভাগের ৬ জন উদ্যোক্তাকে প্রতিনিধি বোর্ড অফ গভর্নরস বা BOG তে থাকার কথা থাকলেও আজ অবধি কোন নারী উদ্যোক্তা প্রতিনিধি রাখা হয়নি আপনারা জেনে নিতে পারেন এটি সংশোধন করে বাদ দেয়া হয়েছে,জয়িতা ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অফ গভর্নর অথবা BOG তে ৮ বিভাগের ৮জন নারী উদ্যোক্তা প্রতিনিধি রাখতে হবে।
৩) যতদিন পর্যন্ত জয়িতা টাওয়ারের কাজ সম্পূর্ণ না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের রাপা প্লাজায় ব্যবসা পরিচালনা করতে দিতে হবে।
৪) অবিলম্বে জয়িতা ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাকালীন নারী উদ্যোক্তাদের লিখিতভাবে তালিকা প্রকাশ এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে হবে।
৫) জয়িতা ফাউন্ডেশন এর গঠনতন্ত্র প্রকাশ করা হোক এবং জয়িতা ফাউন্ডেশন এর গঠনতন্ত্রে নারী উদ্যোক্তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
৬) জয়িতা টাওয়ার ১২ তলা ভবনের ২ টি ফ্লোরে, রাপা প্লাজাস্থ বিপণন ও ফুড কোর্টের ২০১১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সকল নারী সংগঠনের উদ্যোক্তাদের জয়িতা টাওয়ারে স্বশরীরে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ করে দিতে হবে।
৭) মুসলমানদের প্রধান ২টি ধর্মীয় উৎসব এবং পহেলা বৈশাখ সারা বাংলাদেশের ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা ব্যবসা করে সেখানে জয়িতা ফাউন্ডেশন কিভাবে অমানবিক সিদ্ধান্ত দেয় ?ঈদের ঠিক ৬/৭ দিন আগে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জন নারীদের কর্মসংস্থানের জায়গা হঠাৎ করে বন্ধ করে এতগুলো নারী পরিবার সহ কর্মহীন বেকার হবে আমাদের পূর্ণবাসনের মাধ্যমে এই নারীদের কর্মক্ষেত্র বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর