জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভোটার করার অপচেষ্টার প্রমাণ পাওয়া গেছে।ইতোমধ্যে জড়িত থানা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে সাময়িক বরখাস্ত ও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বুধবার(২৮ জানুয়ারি)নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। এনআইডি ডিজি জানান,জাতীয় পরিচয়পত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে ঢাকা থেকে এনআইডি উইং এর একটি তদন্ত দল জগন্নাথপুরে গিয়ে সার্বিক বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছে। অনিয়মে জড়িত দুজন হলেন- উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান ও নির্বাচন অফিসের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর জুবায়ের ।তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপরই বিভাগীয় ব্যব্স্থা নিতে মামলা করা হয়েছে। তারা গ্রেফতার হয়ে আদালতে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, এ এলাকায় ১০৬ জনকে ভোটার করার অপচেষ্টা করা হয়েছে, যারা বাংলাদেশি নাগরিক হলেও প্রবাসে থাকেন। স্থানীয় অনেকের বায়োমেট্রিক ও আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অনিয়ম সণাক্ত করা হয়েছে। অন্যের আঙ্গুলের ছাপ ও বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে ভোটার হওয়ার সম্ভাবনা নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন,এসব নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হলেও বিদেশে থাকা লোকের পরিবর্তে অন্যের আঙ্গুলের ছাপ ও বায়োমেট্রিক নেওয়ায় তারা শেষ পযন্ত ভোটার হতে পারত না।
তিনি বলেন,আমি শুনেছি এক একটা ভোটার করার ক্ষেত্রে লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। আমরা অন্য কোথাও এরকম তথ্য এখনো পাইনি। আপনারা অপেক্ষা করলে দুই এক দিনের মধ্যে আরো নতুন কোন তথ্য পাওয়া যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আমরা ০৭টি দেশে ভোটার নিবন্ধনের কাজ চালু করেছি। সামনে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ কয়েকটি জায়গায় ভোটার নিবন্ধনের কাজ চালু হবে।
বাড়ি বাড়ি ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে এনআইডি ডিজি বলেন, সোমবার পর্যন্ত ১৭ লাখ ৭ হাজার ৫৭০ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, আমাদের তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।
ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সহকারি সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু ছবি তোলে নিবন্ধন সম্পন্ন করার কাজ। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে।
এদিকে ২০২২ সালে নেওয়া তিন বছরের তথ্যের শেষ ধাপের হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে ১৮ লাখের মতো ভোটার আগামী মার্চে যোগ হতে পারে। সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এর আগে ভোটার তালিকা হালানাগাদ করা হয়েছে ছয়বার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল, ২০১৯-২০২০ ও ২০২২-২০২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি।
ভোটার তালিকা হালানাগাদে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য যে সকল কাগজপত্র তথ্য সংগ্রহকারীদের দিতে হবে:
ক) ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মসনদের কপি
খ) জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের কপি
গ) নিকট আত্মীয়ের এনআইডির ফটোকপি (পিতা-মাতা, ভাই-বোন প্রভৃতি)
ঘ) এসএসসি/দাখিল/সমমান, অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
ঙ) ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি/চৌকিদারি রশিদের ফটোকপি)
ভোটার হওয়ার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে:
ক) নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদের সাথে হুবহু
মিলিয়ে লিখতে হবে
খ) জন্ম তারিখ অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী হতে হবে
গ) স্থায়ী ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোটারের প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে
ঘ) কোনো অবস্থাতেই দ্বৈত বা দুইবার ভোটার হওয়া যাবে না।
এক বিজ্ঞপ্তিতে ইসি জানিয়েছে, একাধিকবার ভোটার হওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ একাধিকবার ভোটার হলে আঙুলের ছাপ পরীক্ষার মাধ্যমে তা সহজেই শনাক্ত করা যায়।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর