বান্দরবনের লামা উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২টির বেশি দোকান ঘরের জায়গা জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থিত বিভিন্ন লোকজন উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাম্বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের এই জায়গা দোকান দখল করে রেখেছে।
দীর্ঘ পাঁচ মাস হলো আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে গেলেও এখনো তাদের দোসররা এইসব অবৈধ দখল ছেড়ে দেয়নি। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত ও শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানটির জায়গা জবরদখলের বিষয়ে সর্ব মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
জানা যায়, ৩০৭ নং চাম্বি মৌজার ১৮ নং খতিয়ানের দাগ নং ১৯২, ১৯৩ দাগাদির আন্দর ০.৯৮ শতক জমির উপর তৈরি করা হয়েছিল বিদ্যালয়টি। বর্তমানে ১২০০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী ও ১৪ জনের শিক্ষক মন্ডলী নিয়ে চলছে এই বিদ্যালয়। যুগের পরিবর্তনের সাথে তালমিলিয়ে আজ বহুতল ভবনে ভরপুর বিদ্যালয়টি।
বহুতল ভবন আর শিক্ষকের পরিবর্তন হলেও বিদ্যালয়ের জমির উপর নির্মিত পাকা, সেমিপাকা জবর-দখলকৃত দোকানঘরগুলো আজও আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের ভগ্নিপতি এইচ এম আবু জাহাঙ্গীর চৌধুরী প্রকাশ (কালা জাহাঙ্গীর) সহ অনেকের দখলে। ৫ আগস্টের পর চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন পলাতক হলেও উদ্ধার হয়নি বিদ্যালয়ের জমি।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দখলকৃত জমি উদ্ধারের জন্য সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম ইকবাল আহসান সাহেব বাদী হয়ে ৯৬/৯৭ সালে একটি বে-দখল উদ্ধারের মামলা করেন। তিনি মারা যাওয়ার পর বর্তমান দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন মামলা পরিচালনা করে আসছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, রাজনৈতিক অকপট আর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির রোষানলে শেষ পর্যন্ত মামলাটি বিজ্ঞ আদালত খারিজ করে দেয়।
স্কুলের সাবেক সভাপতির নেতৃত্বে স্কুলের জায়গায় তৈরি করা হয় দোকান। বর্তমান প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে তদবির চালায়। উপজেলা, জেলা শিক্ষা অফিস, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সকলেই বিষয়টি অবগত আছেন- কিন্তু সবাই যেন দখলবাজদের কাছে জিম্মি। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি দখলবাজদের হাত থেকে উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠানের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া এলাকার জনগণ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন প্রধান শিক্ষিকা।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ শতক জমি দখলদারদের হাতে। তাহারা দোকান তৈরি করে তাতে ব্যবসা করছে। দখলদারদের ৩/৪ জন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সামান্য ভাড়া দিত।
কিন্তু ৮/৯ বছর থেকে আর কোনো ভাড়া দেয়নি সবার সাথে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চুক্তিনামা রয়েছে। বাকিরা কখনও ভাড়া দেয়নি। জসিম উদ্দিন চেয়ারম্যান সভাপতি থাকাকালে তাহার বোন জামাই আবু জাহাঙ্গীর ৪টি প্লট দখল করে দোকান তৈরি করে। তাছাড়া যুবলীগের অফিস, আব্দুল লতিফ, নুরুল আবছার, ইসহাক ভুঁইয়াগং দখলে আছেন।
দখলদার আব্দুল লতিফ জানান, দীর্ঘ বছর আগে খালি জায়গায় আমরা দোকান ঘর নির্মাণ করে দখলে আছি এগুলো অনেক লম্বা কথা পরে বলবো।
এদিকে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রধান শিক্ষকের লিখিত আবেদনের জেরে লামা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সরেজমিনে বিদ্যালয়ের জবরদখলের তদন্ত কাজ শেষ করেছি। তাতে জবর দখলের সত্যতা মিলেছে। আমি তদন্ত রিপোর্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জমা দিয়েছি।
প্রধান শিক্ষিকা সাবিনা ইয়াছমিন আরো জানান, দীর্ঘ ৩০ বছরেও উদ্ধার হয়নি বেদখল হওয়া বিদ্যালয়ের জমি। মামলা, অভিযোগ আর কত দিবো। প্রভাবশালীদের হুমকি আর ভয়ভীতির কাছে আমরা অসহায়।
লামা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (অ:দা:) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ণ দেব জানান, তদন্ত রিপোর্টে সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর