বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশের মানুষের আস্থা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। অন্যরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। কিন্তু দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি আমাদের। এই দেশকে রক্ষা করা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। দেশের মানুষের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করার দায়িত্ব।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে ঝিনাইদহের জোহান ড্রিম ভেলি পার্কের মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মশালায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় নড়াইল, যশোর ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদস্থ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন আন্দোলনে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা শহিদ ও আহত হয়েছেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে। এছাড়া বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারগুলোকে দলীয় এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতা করা হবে ইনশাআল্লাহ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের নামে নিজ নিজ এলাকার সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৩১ দফা আপনারা মানুষের কাছে নিয়ে যাবেন। এই ৩১ দফা আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য তৈরি করেছি। আমরা সকল মানুষের কথা শুনে ৩১ দফা তৈরি করেছি। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখুন, ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি সম্ভব হবে।
আমাদের লক্ষ্য একটাই, জনগণ, জনগণ এবং জনগণ। এই মানুষগুলোর ওপর বিগত ১৫ বছরে অবর্ণনীয় নির্যাতন হয়েছে। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে ১৬ বছরে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা খুন, গুম, হামলা, মামলার শিকার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে আমাদের কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জনগণের একটি বিশাল অংশ বিশ্বাস করে, আগামীতে দেশের যদি ভালো কিছু হয়, সেটা বিএনপির দ্বারাই হবে। স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ গঠনে নিজেই মাঠে ঘাটে হেঁটে হেঁটে কাজ করেছেন। আমরা শহীদ জিয়ার সেই নীতি নিয়ে কাজ করতে চাই।
তারেক রহমান বলেন, আমরা একাত্তর সালে দেখেছি কোনো কোনো রাজনৈতিক দলকে, তারা এ দেশের মানুষকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়ে, যুদ্ধকে সঠিকভাবে সংগঠিত না করে বর্ডার ক্রস করে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে। আবার কাউকে কাউকে আমরা দেখেছি সরসারি এই দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করতে। কিন্তু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছেন। পরবর্তীতে দেশের মানুষের মাধ্যমে দায়িত্ব পেয়ে তিনি দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছেন।
বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, দেশের ভিতরে ও বাইরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কারণ, বিএনপি জনগণের দল। নিজেদেরকে জনগণের আস্থায় নিয়ে যেতে হবে। নিজেদেরকে শুধরাতে হবে। দেশের প্রতিটি খাত ধ্বংস করে দিয়ে গেছে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। আগামীর সরকারের জন্য দেশ চালানো হবে এক চ্যালেঞ্জ। কাজেই, আগামীতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরতে পারবে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণ করা যাবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সকল প্রতিশোধ নেব। আমি মনে করি, ৩১ দফার বাস্তবায়নই বড় প্রতিশোধ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। এজন্য আমাদের দায়িত্ব অন্য দলগুলোর চেয়েও বেশি।
৩১ দফা নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অপ্রয়োজনীয় খরচ যদি কমানো যায়, দুর্নীতি রোধ করা গেলে বেকার ভাতাসহ অন্যান্য খাতে ভাতা ব্যবস্থা চালু ও ভাতা বৃদ্ধির করা সম্ভব। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করব।
কোটা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, ৫% এর বেশি কোটা থাকা উচিত নয়। ফ্যাসিস্ট সরকার কোটাপ্রথার লাগামহীন ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়েছিল। আমরা সেটা করব না। আমি বারবার বলেছি, কোটা নয় মেধার মূল্যায়ন করতে হবে।
স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এর পেছনে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের স্বার্থ জড়িত ছিল বলে ধারণা করা যায়। আমরা স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। কারণ স্বনির্ভর দেশ গড়তে সুস্থ সবল নাগরিকের গুরুত্ব অনেক বেশি।
এর আগে সকাল ১০টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক কর্মশালা শুরু হয়। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু। ভার্চুয়াল সভায় সমাপনী বক্তব্য দেন অধ্যাপক নার্গিস বেগম।
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনার সভাপতিত্বে কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক ড. মোরশেদ হাসান খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন, মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, মিডিয়া সেলের সদস্য ও প্রশিক্ষক ফারজানা শারমিন পুতুল, বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর