কক্সবাজার শহরের ঘুণগাছ তলা এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে মিছিলটি শেষ করা হয়। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার পর হঠাৎ মিছিলটি বের হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, শহরের প্রধান সড়কের ঘুণগাছ তলায় ১৫ থেকে ২০ জন নেতাকর্মী মিছিল করছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগের দাবিসহ নানা স্লোগান দিচ্ছেন। এই মিছিলের কারো ছিল মুখ খোলা আবার কারো মুখ ছিল মাস্ক দিয়ে ঢাকা। সামনে ব্যানার নিয়ে তারা প্রধান সড়কের ঝাউতলার মোড় পর্যন্ত যান। এরপর ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে তারা সরে পড়েন।
এদিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কক্সবাজার শহরে আলোচনার সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাস্তায় নামে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরও। একসঙ্গে চলে বিক্ষোভ মিছিল। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগবিরোধী স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে কক্সবাজার। এ সময় ছাত্রনেতারা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে হুঁশিয়ার করে দেন।
শহরের বার্মিজ মার্কেট এলাকায় সংক্ষিপ্ত পথসভা করে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় ছাত্র প্রতিনিধি শাহেদ বলেন, ‘কিছু দিন আগে আমরা ছাত্রলীগকে বলেছিলাম “দেখা না দিলে বন্ধু কথা কইও না”। তাই হয়ত তার টুস করে দেখা দিতে এসে আবারও টুস করে গর্তে মিলিয়ে গেছে।’
জেলা ছাত্রদল নেতা ফাহিমুর রহমান বলেন, ‘শান্ত কক্সবাজারকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। আওয়ামী লীগের এই পাঁয়তারা কক্সবাজারবাসী যে কোন মূল্যে রুখে দেবে।’
আওয়ামীলীগের মিছিলের কিছুক্ষণ পর বিক্ষোভ মিছিল বের করে ইসলামী ছাত্রশিবির। যা কক্সবাজার শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহরের লালদিঘি পাড়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়।
সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভায় জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুর রহীম নূরী বলেন, ‘এখনো আমাদের শরীরের রক্ত গরম হয়নি।’ শিবির নেতা বলেন, ‘যে দিন রক্ত গরম হবে সে দিন এই কক্সবাজার থেকে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।’
তিনি ঝটিকা মিছিলের সাথে জড়িত সকলকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।
পরে আব্দুল্লাহ আর নোমান নামের এক নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। সাধারণ ছাত্রসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তিনি মিছিলে অংশ গ্রহণ করেনি। নোমান রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাকে ধরে পুলিশে হাতে তুলে দেন শিবিরের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কক্সবাজারে দলটির নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এ সময় তারা কোনো কর্মসূচিও পালন করেননি। দলটির সামনের সারির অধিকাংশ নেতাই এখন আত্মগোপনে আছেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারও হয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে কয়েক মিনিটের ঝটিকা মিছিল করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করা হয়েছে। তার ওপর চলছে মামলা ও ধরপাকড়। বেশিরভাগ নেতাকর্মী হয়ত বিদেশে চলে গেছেন, নতুবা দেশে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সব মিলিয়ে ভালো নেই দলটির নেতাকর্মীরা। তবে শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে ছাত্রলীগ। মাঝেমধ্যে বের করছে ঝটিকা মিছিল। তবে ঝটিকা মিছিল বের করে পার পাচ্ছেন না ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যে পুলিশ এতদিন বিএনপি-জামায়াতকে চাপে রেখেছিল– তারাই এখন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের চোখে চোখে রাখছে। ঝটিকা মিছিল করার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করার পর চালানো হচ্ছে গ্রেপ্তার অভিযান। ফলে সাধারণ নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য যে মিছিল, সেটা তাদের জন্য ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর