ওসিকে পেটানোর হুমকি দেওয়া চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘বুড়ির নাতি’ ওরফে ‘ছোট সাজ্জাদ’ কে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।
তাকে ধরতে তথ্যদানকারী কিংবা সহায়তাকারীকে নগদ অর্থ পুরস্কার দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজের পক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. সাজ্জাদ হোসেনকে আইনের আওতায় আনার জন্য তার অবস্থান সংক্রান্ত সঠিক তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করবে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে উপযুক্ত অর্থ পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হবে। সংবাদদাতার সহায়তাকারীর পরিচয় অবশ্যই গোপন রাখা হবে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামি, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’। হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১০টিরও বেশি মামলার আসামি তিন। বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ। আলোচিত এইট মার্ডার মামলার মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি জামায়াত-শিবির ‘ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলী খানের সহযোগী হিসেবে এই ‘ছোট সাজ্জাদ’ অপরাধজগতে পা রাখেন। বিদেশে বসেই সাজ্জাদ আলী খান নির্মাণাধীন ভবন, বাসাবাড়ি এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করান তাকে দিয়ে।
সবশেষ গত ২৮ জানুয়ারি রাতে ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দেন তিনি। ফেসবুক লাইভে সাজ্জাদ হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর (ওসি) যদি শাস্তি না হয়, আমি তোকে কুত্তার মতো পেটাবো। অক্সিজেন থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত কুত্তার মতো ন্যাংটা করে পেটাবো। কোর্টের রায় আসা পর্যন্ত তোরা টিকে থাকবি। যেখানেই থাকস আমি পিটাবো। প্রয়োজনে আমি মরে যাবো, তোদেরকে মেরে। তবুও আমি হার মানবো না। দেখি, তোদের জোর বেশি না আমার। আরিফ তুই প্রস্তুত থাকিস। তোর উচ্চপদস্থ যারা আছে তাদেরকে বলিস।’ এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ওই ওসি।
এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান জানান, ফেসবুক লাইভে এসে সাজ্জাদের হুমকির ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। গত সোমবারও সাজ্জাদের সহযোগীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাজ্জাদের চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি বন্ধে বায়েজিদ থানা-পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে এই সন্ত্রাসী।
সর্বশেষ গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড়ে তাকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালায় সে। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়।
এদিকে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ধরা না পড়ায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা আতঙ্কে রয়েছেন। এলাকায় তার চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলেন এই সন্ত্রাসী।
সাজ্জাদ পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তিনি একের পর খুন করলেও পুলিশ তাকে ধরতে পারছে না।
এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী।
তারও আগে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও দুজন গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
গত বছর ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন–কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর